বিয়েটা যখনই হোক না কেন মানব জীবনে একবারই এর প্রকৃত স্বাদ পাওয়া যায়। ধুমধাম করে বিয়ে করা মানেই তো অনেক টাকার ধাক্কা। কিন্তু আত্মীয়-স্বজনের মুখ রাঙাতে ধুমধাম করে বিয়ে করতে হয়। এদিকে আবার মেয়ের বাবার ক্ষেত্রে পাত্র পক্ষের সমস্ত দাবি দাওয়া মেনে তারপরেও মেয়ের বিয়ে দিতে হয় যথেষ্ট ধুমধাম করে।
কিন্তু ভাবুন তো ছেলে বা মেয়ের বিয়েতে টাকা খরচ হলো অনেক কম, কিন্তু বিয়ে হলো রীতিমত ধুমধাম করে। এমন উপায় আছে কি?
অবশ্যই, বিয়ের খরচ কমানোর জন্য কিছু উপায় আপনি মেনে চলতে পারেন, যা অনেক কার্যকরী।
বিয়ের তালিকা তৈরি করুন: বিয়ের সমস্ত কাজ করার আগে একটা লিস্ট বানিয়ে রাখুন। অবশ্যই বাড়ির সকলের উপস্থিতিতে কাজটি করবেন, যাতে আপনি ভুলে গেলেও অন্যরা তা মনে করিয়ে দেয়। এরপর আপনার সামর্থ্য অনুযায়ী প্রয়োজনীয় খাতগুলোতে খরচ করুন। দেখবেন অনেক খরচ কম হবে। তারপর সেখান থেকে যদি কিছু খরচ কমে তাহলে তো একেবারে সোনায় সোহাগা।
উপযুক্ত বাজেটে প্রস্তুতি: বিয়ের প্রস্তুতির এক অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো উপযুক্ত বাজেট নির্ধারণ করা। পরিবারের সঙ্গে বসে বর কনে যদি বিয়ের একটি নির্ধারিত সূচি তৈরি করেন, তাহলে ব্যয় অনেকটাই নিয়ন্ত্রণে আনা যেতে পারে।
অতিথি আপ্যায়নে কাটছাঁট: বিয়ে মানে বন্ধুবান্ধব, আত্মীয় পরিজনদের নিয়ে একটি মিলনমেলা। কিন্তু এরই মধ্যে অবাঞ্ছিত অতিথি কিংবা বহুদিন যোগাযোগ না থাকা অতিথিদের বাদ দিয়ে দেওয়াই শ্রেয়। এতে খরচের পরিমাণটা কিছুটা কমবে।
আমন্ত্রণ করুন ডিজিটাল মাধ্যমে: ফেসবুক, ইমেইল, হোয়াটসঅ্যাপ-এর যুগে আমন্ত্রণের পদ্ধতিটা সেই চিরাচরিত বিয়ের কার্ড দিয়ে না করে নিজের কাছের মানুষদের আমন্ত্রণ করুন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে।
স্থান নির্বাচনে সতর্কতা অবলম্বন করুন: বিয়ে কোথায় হবে সেই স্থানটি আগে থেকে বেছে নেওয়া একটা বড় ব্যাপার। যদি আপনার বাড়ি অনেক বড় হয়, তাহলে অন্য কোথাও বাড়ি ভাড়া না করে নিজের বাড়িকেই সুন্দরভাবে সাজিয়ে অনুষ্ঠান সমাপ্ত করতে পারেন। যদি আপনার বাড়ি না থাকে তাহলে পরিচিত কোন ভাড়া বাড়ি বুক করুন। যেখানে খরচ অনেক কম হবে। তবে সেটা যেন কোন ভাবেই আপনার বাড়ি থেকে খুব দূরে না হয়। দূরে হলে গাড়ি খরচ বেড়ে যেতে পারে। এটা অতিরিক্ত খরচ হয়ে যাবে।
ডিসকাউন্টের সময় কেনাকাটা করুন: ঋতু ও বিভিন্ন উতসব উপলক্ষে বছরের বিভিন্ন সময়ে শপিংসেন্টারগুলোতে নানা রকমের ডিসকাউন্ট থাকে। নজর রাখুন সেগুলোর দিকে, আর প্রয়োজনীয় জিনিসটি কখন কোথায় সস্তায় মিলছে দেখে তখনই কিনে ফেলুন।
ডেকোরেশনের দিকে খেয়াল রাখুন: ডেকোরেশনের পেছনেও কম খরচ করার ফর্মুলা ব্যবহার করা যেতে পারে। যেমন ধরুন কোনো কম্পানিকে সেট ডেকোরেশনের ভার না দিয়ে আপনার পাড়ার কোনো ডেকোরেশনের দোকানকে দায়িত্বভার দিতে পারেন। বন্ধু মহলের ফ্যাশন সচেতন বন্ধু থেকে এ বিষয়ে পরামর্শ নিন। উভয়ের সিদ্ধান্তে কম খরচের একটি পথ বের করুন।
খাওয়া দাওয়ার ক্ষেত্রে সতর্ক থাকুন: অহেতুক বেশি পদ না বাড়িয়ে খাবারে বৈচিত্র আনুন। যদি ট্র্যাডিশনকে গুরুত্ব দিতে চান তাহলে ওই ধরনের কোন ট্রাডিশনাল খাবারের আয়োজন করতে পারেন। অন্যথায়, কোন ক্যাটারিং সার্ভিসের উপর ভার না দিয়ে নিজেরাও খাবারের আয়োজন করতে পারেন। এরফলে আপনার খরচ অনেকাংশে কমে যাবে এবং উপযুক্ত আতিথিয়তা হবে।
ড্রেস বানিয়ে নিন: অনেকেরই ডিজাইনের পোশাকের প্রতি লোভ থাকে। কিন্তু ভাবুন তো এই পোশাকের পেছনে কত টাকা খরচ হয়ে যেতে পারে। কিন্তু জানেন কি আপনিও বানিয়ে নিতে পারেন পছন্দসই পোশাক? এখন গ্রামে-শহরে অনেক দোকান আছে, যেখানে পোশাকে যুক্ত করার অতিরিক্ত কিছু ম্যাটেরিয়াল পাওয়া যায়। এসব ম্যাটেরিয়াল পোশাকে যুক্ত করে আপনার পোশাক আকর্ষণীয় করে তোলা সম্ভব।
বিয়ের গহনা: বিয়ের গহনা একটা বড় খরচের ব্যপার। কিন্তু বিয়ে যখন ঠিক হবে তখন গহনা না কিনে আগে থেকে একটু একটু করে কিনে রাখুন। তাহলে বিয়ের সময় চাপ কম পড়বে।
ভিডিও এবং ফটো: বিয়ের ভিডিও বা ফটো কোনো পেশাদারকে তুলতে না দিয়ে আগে থেকে একটু আধটু কাজ পারে এমন কাছের ছোট ভাই, বোনকে দিয়ে ফটো তোলান। প্রয়োজনে আগে থেকে গুগল থেকে বিভিন্ন জনের বিয়ের ছবি দেখুন। ছবি তোলার এঙ্গেলগুলো বুঝে নিন। দেখবেন সেও ভালো ফটো তুলতে পারবে। আর পূর্বে নির্ধারণ করা খরচের তালিকা থেকেও অনেক কম খরচ হবে।