স্বাস্থ্যমন্ত্রীর সাতটি মন্তব্যের ব্যাখ্যা দিল টিআইবি

বাংলাদেশ

গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের করা মন্তব্যের পাল্টা বক্তব্য দিয়েছে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ (টিআইবি)। সোমবার গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলেছে, গবেষণা প্রতিবেদনকে মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত না বলে কর্তৃপক্ষের উচিত করোনা মোকাবিলায় সক্ষমতা, স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি বৃদ্ধিতে মন দেওয়া।

১২ জুন এক ভার্চ্যুয়াল অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী টিআইবির ‘করোনাভাইরাস মোকাবিলা: কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ (তৃতীয় পর্ব)’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনের সমালোচনা করে বলেন, রিপোর্টটি আগাগোড়াই ভুল তথ্যসংবলিত।

শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে টিআইবি মনগড়া সমালোচনা করেছে। এমন মন্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে টিআইবি বলছে, গবেষণায় ব্যবহৃত প্রতিটি তথ্যের সূত্র দেওয়া আছে। এতে সামাজিক বিজ্ঞানের আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। এর জন্য ১ হাজার ৩৮৭ জন টিকাগ্রহীতার অভিজ্ঞতা এবং ১২টি পেশার কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ৩৭৩টি তথ্য নেওয়া হয়।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছিলেন, কেন করোনা বাড়ছে, তা বলেনি টিআইবি। কারণ, টিআইবি করোনা নিয়ন্ত্রণে কোনো প্রচারণা করেনি বা ভূমিকা রাখেনি। এ প্রসঙ্গে টিআইবি বলেছে, করোনা কেন বাড়ছে, তার ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ প্রতিবেদনে আছে। সুশাসনের ঘাটতি চিহ্নিত করে ও প্রয়োজনীয় সুপারিশ তুলে ধরে টিআইবি অতিমারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সহযোগী ভূমিকাই পালন করছে।

জাহিদ মালেক বলেছিলেন, বসুন্ধরা আইসোলেশন সেন্টার, টিকার অগ্রাধিকার পাওয়া জনগোষ্ঠী ঠিক করা ও বিদেশগামী যাত্রীদের সেবা নিয়ে টিআইবির বক্তব্য ছিল মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। বিজ্ঞপ্তিতে টিআইবি বলেছে, প্রতিটি বিষয়ে গণমাধ্যমে বিস্তারিত প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, গবেষণায় সেসব তথ্য যাচাই করার পর উপস্থাপন করা হয়েছে।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী সেদিন বলেছিলেন, স্বাস্থ্য খাতের দুর্নীতির অভিযোগ তোলা অনেকের কাছেই এখন একটি ফ্যাশনে পরিণত হয়েছে। কেউ স্বাস্থ্য খাতের বড় কোনো দুর্নীতি দেখাতে পারেনি। জবাবে টিআইবি বলছে, জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের বিভিন্ন ক্রয় ও সরবরাহে অনিয়ম-দুর্নীতি লক্ষ করা গেছে। এসবের বিরুদ্ধে গত এক বছরেও কোনো যথোপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। কিছু ক্ষেত্রে কর্মকর্তা বদলি হয়েছেন মাত্র।

করোনা পরীক্ষার সুযোগ বৃদ্ধি ও আইসিইউ শয্যা বিষয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের পরিপ্রেক্ষিতে টিআইবি বলেছে, আরটি–পিসিআর পরীক্ষা এখনো ৩০ জেলার ১২৯টি পরীক্ষাগারের মধ্যে সীমিত। অন্যদিকে সারা দেশের জেলা হাসপাতালে ১০টি করে আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত করার কথা ছিল। এক বছরের বেশি সময়ে তা হয়নি। ১২ জুন স্বাস্থ্যমন্ত্রী আরও বলেছিলেন, ভারতের সঙ্গে টিকা ক্রয় চুক্তিতে টিআইবি যে অস্বচ্ছতার কথা বলেছে, তা সত্য নয়। দেশের সব মানুষই জানে, কী ছিল চুক্তিতে এবং কেন ভারত চুক্তির টিকা দিতে পারেনি। এ প্রসঙ্গে টিআইবি বলেছে, এই চুক্তির ক্ষেত্রে শর্তাবলি, ক্রয়পদ্ধতি, অগ্রিম প্রদান, তৃতীয় পক্ষের ভূমিকা, তাদের অন্তর্ভুক্তির কারণ ও তারা কিসের ভিত্তিতে কমিশন পাচ্ছে, এসব বিষয় প্রকাশ করা হয়নি। চুক্তি নিয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বেক্সিমকো ফার্মা কর্তৃপক্ষের বক্তব্য পরস্পরবিরোধী। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা অনুযায়ী, ক্রয় পরিকল্পনা ও ক্রয় চুক্তি সম্পাদন নোটিশ ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার কথা থাকলেও তা করা হয়নি।