সাফল্যের সিঁড়ি বেয়ে ছুটে চলার গল্প!

উদ্যোক্তা

চিটাগং ক্লাবের নানা দায়িত্ব পালন করেছেন টানা ২৭ বছর ধরে। ছিলেন ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যানও। চট্টগ্রাম সিনিয়র’স ক্লাবেরও অন্যতম কর্ণধার তিনি। এই দুই ক্লাবে নেতৃত্বস্থানীয় দায়িত্ব পালনের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে এবার চলেছেন ‘চট্টগ্রাম এলিট ক্লাব’কে সাথে নিয়ে। বলছিলাম চিটাগং ক্লাবের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান ও বর্তমানে চট্টগ্রাম এলিট ক্লাবের প্রেসিডেন্ট আমানুল্লাহ আল সগির ছুট্টু’র কথা।

একদল তরুণ ও মেধাবীকে সাথে নিয়ে চট্টগ্রাম নগরবাসীর জন্য একটি অনবদ্য সামাজিক ক্লাব ‘চট্টগ্রাম এলিট ক্লাব লিমিটেড’ পরিচালনা করছেন তিনি। তিনি ‘ক্লিক’কে বলেন, মানুষ যেখানে একে অপরের সাথে সাক্ষাৎ ও মেলামেশার মাধ্যমে অবসরের সময়গুলো কাটায় সেটাই ক্লাব। আমাদের সবারই একটু বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে।

সারাদিন কাজের পর সন্ধ্যায় নিজের জন্য একটু সময় প্রয়োজন। যাতে মনকে চাঙা করে পরবর্তী কাজের জন্য তৈরি হতে পারি। আবার কখনো শরীর ভালো থাকে তো, মন ভালো থাকে না। তখন ক্লাবের সদস্যরা একে অপরকে সময় দিয়ে মানসিক অস্থিরতা থেকে কাটিয়ে উঠতে সাহায্য করবেন। যদি শরীর ভালো না থাকে, তারও ব্যবস্থায় রাখা হয়েছে এখানে। এলিট ক্লাবের সদস্যদের চেকআপের জন্য ব্যবস্থা করা হয়েছে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকেরও, শীররচর্চার জন্য রয়েছে জিমনেশিয়াম।

তিনি বলেন, সামাজিক ক্লাব আমাদেরকে শেখার সুযোগ করে দেয়। নিজের দিকে তাকাতে এবং অন্যের সাথে সময় কাটিয়ে তাদের অভিজ্ঞতা, জানা-অজানার জ্ঞান সম্পর্কে ধারণা দেয়। ক্লাব আমাদেরকে বাইরে বেরিয়ে নতুন কোনো চ্যালেঞ্জ, নতুন সাপোর্ট পেতে সাহায্য করে। পরে এটাই সময়ের অনেক মূল্যবান বিনিয়োগ হিসেবে ধরা দেয়।

ক্লাব মানে শুধু উচ্চবিত্ত বা ব্যবসায়ীদের জায়গা নয়। এলিট ক্লাবের সদস্য হয়েছেন নগরীর বুদ্ধিজীবী ও শিক্ষাবিদরাও। ক্লাবের নির্বাহি কমিটিতে ভাইস প্রেসিডেন্ট হিসেবে নেতৃত্ব দিচ্ছেন জনাব সরওয়ার আলম, ব্যবসায়ী খন্দকার ইবনে বোরহান সুইট ও চবি অধ্যাপক মাছুম আহমেদ। দায়িত্ব পালন করে ক্লাবকে এগিয়ে নিচ্ছেন জেনারেল সেক্রেটারির ব্যবসায়ী নওশাদ চৌধূরী মিটু, জয়েন্ট জেনারেল সেক্রেটারি চবি অধ্যাপক এ জি এম নিয়াজ উদ্দিন, কমিটির নির্বাহী সদস্য সমাজকর্মী ও উদ্যোক্তা সাহেলা আবেদীন, ব্যবসায়ী টিংকু আব্দুর রহমান, এইচ এম ইলিয়াস ও আহমেদ নূর ফয়সাল ও সিব্বির আহমেদ।

এছাড়া ক্লাবটির সাথে পথচলা শুরু করেছেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর ও কবি হোসাইন কবির, প্রফেসর ও শিল্পী মোহাম্মদ জসিম উদ্দিন, প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার সাইদ, প্রফেসর মনজুরুল আলম, প্রফেসর ড. মুহাম্মদ আলাউদ্দিন ব্যবসায়ী মহসিন উল আবেদীনসহ নানা পেশার আরও অনেকে।

একটি ক্লাব তাদের সদস্যদের জন্য নিজের ঘরের চেয়েও স্বস্তিকর একটা ঘর তৈরি করে। যেখানে সদস্যরা ফিল্ম, মিউজিক, ফ্যাশন, আর্ট ডিজাইন এবং ভালো থাকার জন্য বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে পারে। এলিট ক্লাবও তার সদস্যদের জন্য ইতোমধ্যে রেস্টুরেন্ট, জিম, গেমস রুম তৈরি করেছে। ধীরে ধীরে বাকি সবকিছুর কাজ শুরু করবে বলে জানান ক্লাবটির প্রেসিডেন্ট আমানুল্লাহ আল সগির।

এর আগে চট্টগ্রামের অভিজাত ক্লাব ‘চিটাগাং ক্লাব’র ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি। আরেক অভিজাত ক্লাব ‘সিনিয়রস ক্লাব’র ইলেকশন কমিশন বোর্ডের দায়িত্ব পালন করেছেন কয়েকবার। কাজ করার সময় এ দুটি ক্লাবে বিভিন্ন চড়াই উৎরাই দেখেছেন তিনি। সেসব থেকে এবার তরুণদের জন্য বিভিন্ন সুযোগ ও সুবিধা নিয়ে কাজ করছেন ‘এলিট ক্লাব’র জন্য।

অভিজাত ক্লাবগুলোতে বয়সের সীমা ও সদস্য ফিস একটি বাধা। অথচ এলিট ক্লাবে ২৫ বছর বয়সেও যুক্ত হতে পারবেন যে কেউ- বলেন প্রেসিডেন্ট। তিনি আরও বলেন, মানুষ সামাাজিকভাবে থাকতে চায়। যেখানে তার শ্রেণি-পেশার বিভিন্ন মানুষের সাথে সে একত্রিত হতে পারবে। কিন্তু সীমা নির্ধারণ করে দিলে তারা বাধা পায়। তখন তারা যাবে কোথায়?

এসব কথা ভেবেই নগরীর অভিজাত ক্লাবগুলোর মত একই সুবিধাদি নিয়ে দাঁড় হচ্ছে এলিট ক্লাব। বায়েজিদের আরেফিন নগরে ক্লাবের নিজস্ব কম্পাউন্ডে তৈরি হবে ক্লাব হাউস। ব্রিটিশ স্টাইলে সদস্যদের জন্য আধুনিক সব সুযোগ-সুবিধা নিয়ে কাজ করবে ক্লাবটি, যাতে পুরো এশিয়ার মধ্যে সুনামের সাথে তা পরিচিত পায়।

এর আগে ডিরেক্টর হিসেবে চট্টগ্রাম চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজের দায়িত্ব পালন করেছেন আমানুল্লাহ আল সগির। কাজ করছেন চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের বোর্ড মেম্বার হিসেবেও। এছাদা বাংলাদেশ মাস্টার স্টেভডোর এসোসিয়েশনের এক্সিকিউটিভ কমিটির সদস্যও তিনি।চট্টগ্রামের রাউজান উপজেলার চিকদাইরের সন্তান আমানুল্লাহ। তার বড় মেয়ে এখন ঢাকার একটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলে শিক্ষকতা করছেন এবং ছোট মেয়ে যুক্তরাজ্যের লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে আইন বিষয়ে স্নাতক সম্পন্ন করেছেন।

উল্লেখ্য, ৬০ লাখ মানুষের নগরী চট্টগ্রামে মননশীল সামাজিক ক্লাবের ঘাটতি পূরণের প্রচেষ্টাসহ বন্ধুত্ব সুদৃঢ়করণ, সমাজের প্রতি দায়িত্বশীলতা বিনির্মাণ, পরিবারের অপরিহার্য বিনোদন সৃষ্টি ও নিজেদের মান-মর্যাদা সুরক্ষার প্ল্যাটফরম প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে সমমনা পেশাজীবীদের সমন্বয়ে গঠিত হয় ‘চট্টগ্রাম এলিট ক্লাব লিমিটেড (সিইসিএল)। ২০২০ সালের ০১ জানুয়ারি চট্টগ্রাম নগরীর পাঁচ তারকা হোটেল রেডিসন ব্লু চট্টগ্রাম বে ভিউ এর মেজবান হলে বর্ণিল আয়োজনে সূচিত হয় চট্টগ্রাম এলিট ক্লাব লিমিটেড এর আনুষ্ঠানিক পথচলা।