ই-কমার্সে সম্ভাবনাময় সিরাজগঞ্জের রেশম সিল্ক

উদ্যোক্তা

অনেকে শুনে অবাক হতে পারেন সিরাজগঞ্জে আবার রেশম সিল্ক?
হ্যা সিরাজগঞ্জেও রেশম সিল্ক আছে। সিরাজগঞ্জের রেশম সিল্ক নিয়ে আজকে বলব।

তুঁত গাছের চাষ এবং তুঁত পাতার দ্বারা পলু পালনের মাধ্যমে রেশম গুটি উৎপাদনকে রেশম চাষ বলা হয়। এটা সম্পূর্ণ ভাবে কৃষি ভিত্তিক একটি অর্থকরী ফসল। অপরদিকে রিলিং এর মাধ্যমে রেশম সুতা (Silk) আহরণ, কৃষি ভিত্তিক শিল্পের পর্যায়ভুক্ত।

গ্রামীণ লোকদের সার্বক্ষণিক কর্মসংস্থান, দারিদ্র বিমোচন এবং আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে দেশে গুণগত মানের রেশম উৎপাদন বৃদ্ধিই ছিল রেশম বোর্ডের মূল লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য।

দেশীও উপকরণ ও প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে উন্নত মানের তুঁত জাত, রেশম কীট এর ডিম উৎপাদন ও সরবরাহ, গ্রামীণ চাষীদের উদ্বুদ্ধকরণ এবং প্রশিক্ষণ প্রদানের কর্মসূচী বাস্তবায়নের প্রচেষ্টা রেশম বোর্ড ১৯৭৯ সাল থেকে করে আসছে।

তবে সিরাজগঞ্জ জেলার, জেলা সদরে রেশম সম্প্রসারণ কেন্দ্রের ব্যবস্থাপকের কার্যালয় এবং এর অধীনে জেলার বিভিন্ন জায়গায় ৮টি উপকেন্দ্র বা ‘রেশম সম্প্রসারণ পরিদর্শকের কার্যালয়’ আছে। এগুলো হলোঃ
সিরাজগঞ্জ সদর, খোকশাবাড়ী,ভাটপিয়ারী, ছোনগাছা , বাগবাটি, কাজিপুর,তাড়াশ ও উল্লাপাড়া ।

সিরাজগঞ্জ সদর উপজেলার বাগবাটিতে রেশম বোর্ডের নিজস্ব জায়গায় রেশম সুতা উৎপাদনের জন্যে একটি ‘মিনি ফিলেচার’ আছে। উক্ত ৮টি রেশম সম্প্রসারণ পরিদশর্কের কার্যালয়ের মাধ্যমে সিরাজগঞ্জ জেলার রেশম চাষ সম্প্রসারণ কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে।

আগ্রহী রেশম চাষীদের মাঝে ৫০ পয়সা মূল্যে তুঁত চারা বিতরণ, রোপন পূর্বক, রোপন কালীণ ও রোপন পরবর্তী পরিচর্যার পরামর্শ, রেশম গুটি উৎপাদনের সাথে জড়িতদের রেশম পলু পালনকালীণ সময়ে বাড়ী বাড়ী যেয়ে সপ্তাহে ১ থেকে ২ দিন কারিগরি পরামর্শ প্রদান, উন্নত মানের রেশম গুটি উৎপাদনের জন্যে প্রশিক্ষণ প্রদানসহ রেশম গুটি বাজারজাতকরণের সমস্ত ব্যবস্থা মাঠ পর্যায়ের মাঠকর্মীগণ করে থাকেন।

২০০৮-০৯ অর্থ বছরে যে সকল রেশম চাষী তুঁত গাছ রোপন করেছেন- জীবিত থাকা সাপেক্ষে সে সকল রেশম চাষীকে তুঁত গাছে খুঁটি লাগানোর জন্য গাছ প্রতি ৪ টাকা ইনসেনটিভ প্রদানের জন্যে রেশমবোর্ড কার্যক্রম গ্রহণ করেছে যা ২০০৯-১০ অর্থ বছরে তুঁত চারা রোপনে রেশম চাষীকে উৎসাহিত করবে।

১৯৯০ পূর্ববর্তী সময় পর্যন্ত সিরাজগঞ্জ জেলার রেশম চাষ কার্যক্রমভুক্ত এলাকাগুলোতে রেশম চাষ বেশ প্রসার লাভ করে। কিন্তু ১৯৯০ পরবর্তীতে বাজার অর্থনীতি চালুর ফলে বিদেশী কাঁচা রেশম সুতা আমদানি হওয়ায় দেশীয় উৎপাদিত রেশম গুটির দাম পড়ে যায় এবং রেশম চাষীরা রেশম চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলে।

পরবর্তীতে যখন রেশম গুটির দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেতে থাকে তখনি ১৯৯৮ সালে প্রথম, ২০০৪ সালে দ্বিতীয় বার এবং ২০০৭ সালে তৃতীয় বার প্রলয়ংকরী বন্যার ফলে রেশম চাষীদের তুঁত গাছ ব্যাপকভাবে মারা যায় এবং রেশম চাষের জন্য পলু ঘর ও পলু পালন সরঞ্জামাদি সম্পন্ন ভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

বাংলাদেশ রেশম বোর্ড ১৯৯৮ বন্যা পরবর্তীতে ঋণ সহায়তা দিলেও পরবর্তী বন্যায় ক্ষতিগ্রস্থ রেশম চাষীদের জন্যে কোন পূনর্বাসন কর্মসূচী গ্রহণ করে নাই। অত্র এলাকার মাটি রেশম চাষের উপযোগী হলেও ঘন ঘন বন্যায় রেশম চাষের অগ্রগতি দারুণভাবে ব্যাহত করে। ব্যক্তি পর্যায়ে যে রেশম চাষী তুঁত গাছ লাগায় তা মূলতঃ নিচু জায়গায় ফলে বন্যায় দারুনভাবে ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

এ সমস্যা সমাধানের লক্ষ্যে সড়ক ও জনপথ, এলজিইডি, পানি উন্নয়ন বোর্ড-এর রাস্তা/ বাঁধে তুঁত গাছ লাগানোর বিকল্প নেই।

রেশম চাষ একটি শ্রমঘন কৃষি কাজ। পরিবারের ছেলেমেয়ে সহ মহিলাদের অলস শ্রম কাজে লাগানো যায়। বছরে ৪/৫ বার এই চাষ করা যায়। একবার তুঁত গাছ লাগালে তা থেকে ৩০ বছর পর্যন্ত ভাল পাতা পাওয়া যায়।

১০০টি ভাল তুঁত গাছ দ্বারা একজন চাষী বছরে ১৬,০০০ থেকে ২৪০০০ টাকা পর্যন্ত আয় করতে পারে। গরীব ও প্রান্তিক চাষীদের পরিবারের বাড়তি আয়ের জন্য এ চাষ অত্যন্ত গ্রামের মানুষকে শহর মুখী না করে আয়ের পথ সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে এ চাষের ভূমিকা অতুলনীয়।

প্রধান কিংবা অপ্রধান আয়ের উৎস হিসেবে রেশম চাষ দারিদ্র বিমোচনে বিরাট ভূমিকা রাখতে পারে। রেশম বাংলাদেশের অতীত ঐতিহ্য। রেশম চাষে ভূমিকা রেখে সিরাজগঞ্জ জেলাও হতে পারে অতীত ঐতিহ্যের গর্বিত অংশীদার।

লেখক : সানজিদা কবির লাবনী , স্বত্বাধিকারী Cordial