কোপা আমেরিকা শুরুর আগে সবাই বলাবলি করছিল, আর্জেন্টিনা এবারের আসরের হট ফেবারিট। দলটাও চমৎকার। মাত্র ২ ম্যাচ যেতে না যেতেই, সুর পাল্টে গেছে এমনকি সমর্থকদেরও। আলবিসেলেস্তেদের খেলা মন ভরাতে পারেনি সমালোচক-সমর্থক কারোই। চিলির বিপক্ষে ১-১ ব্যবধানের ড্র আর উরুগুয়ের বিপক্ষে ১-০ গোলের জয় নিয়ে মাঠ ছেড়েছেন মেসি-ডি মারিয়ারা।
অথচ আর্জেন্টিনার ফরোয়ার্ড লাইনকে বেশ শক্তিশালী মনে করা হচ্ছিল শুরু থেকেই। লিওনেল মেসির মতো বিশ্বসেরা ফুটবলার আছেন। সার্জিও অ্যাগুয়েরো, অ্যাঞ্জেল ডি মারিয়ার মতো অভিজ্ঞরা আছেন। সঙ্গে ইতালি মাতানো তারকা ফরোয়ার্ড লওতারো মার্টিনেজ, জোয়াকিন কোরেয়া, নিকোলাস গঞ্জালেস ও আনহেল কোরেয়া। কোচ লিওনেল স্ক্যালোনির হাতে অনেক অপশান। অথচ তার সুব্যবহার যেন করতেই পারছেন না তিনি!
২ ম্যাচেই মেসির সঙ্গে ফরোয়ার্ড লাইনে রাখা হয় লওতারো মার্টিনেজ ও নিকো গঞ্জালেসকে। দু’জনই একেবারে ব্যর্থ। কোন গোল তো করতে পারেনই নি, উল্টো বেশকিছু সহজ সুযোগ হাতছাড়া করেছেন। মার্টিনেজ আর গঞ্জালেস যেন নেমেছিলেন গোল মিসের মহড়া দিতে! তারপরও কোচ তাদের উপরই আস্থা রেখে গেছেন। যেটি অবাক করেছে সবাইকেই।
১ম ম্যাচে খেলা শেষ হওয়ার মিনিট দশেক আগে নামানো হয় অ্যাগুয়েরোকে। ২য় ম্যাচে আর নামানো হয়নি তাকে।
২ ম্যাচেই শেষের কিছুক্ষণ সময় খেলার সুযোগ পেয়েছিলেন ডি মারিয়া।
ফরোয়ার্ড লাইনে যথারীতি আলো ছড়াচ্ছেন দলের অধিনায়ক লিওনেল মেসি। তার উপর ভর করেই ২ ম্যাচে ৪টা পয়েন্ট পেয়েছে তার দল। আসরে এখন পর্যন্ত যে দু’টো গোল করেছে আর্জেন্টিনা, দু’টোতেই আছে তার অবদান।
১ম ম্যাচে নিজে গোল করে লিড এনে দেন। আর ২য় ম্যাচের গোলে অ্যাসিস্ট করেন। ফরোয়ার্ড লাইনে বাকি সবাই ব্যর্থ। এবং এই ব্যর্থতাই ডোবাচ্ছে আর্জেন্টিনাকে।
আর্জেন্টিনার মিডফিল্ড এখন পর্যন্ত একেবারে হতাশ করেনি সমর্থকদেরকে। ডি পল, পারেদেস, লো সেলসো কিংবা গুইদো রদ্রিগেজরা ভালোভাবেই সামাল দিচ্ছেন মাঝমাঠ। তবে পায়ে বেশিক্ষণ বল ধরে রাখতে পারছেন না তারা। ম্যাচ জিততে হলে বল নিজেদের নিয়ন্ত্রণে রেখে মেসিদেরকে সহায়তা করতে হবে আক্রমনভাগে। যেটি ভালো জানা আছে ডি পলদের। আর্জেন্টিনার ডিফেন্স লাইন নিয়ে ২ ম্যাচে বেশ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছেন কোচ স্ক্যালোনি। ১ম ম্যাচে শুরুর একাদশে রেখেছিলেন ওটামেন্ডি, টাগলিয়াফিকো, মন্টিয়েল আর কুয়ার্তাকে। ২য় ম্যাচেই আনেন পরিবর্তন। খেলান মলিনা, ওটামেন্ডি, রোমেরো, অ্যাকুনা। মলিনা, অ্যাকুনারা নিজেদের সামর্থ্যের জানান দিয়েছেন। তবে বিশেষভাবে নজর কেড়েছেন ক্রিস্টিয়ান রোমেরো। চলতি মাসেই আর্জেন্টিনার জার্সিতে অভিষেক হওয়া এই তরুণ এরইমধ্যে কোচের আস্থার প্রতীক হয়ে উঠেছেন।
তরুণ গোলকিপার এমিলিয়ানো মার্টিনেজও নিজেকে প্রমাণ করেছেন। ১ম ম্যাচে ভিদালের নেয়া জোরালো পেনাল্টিটাও ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন তিনি। তবে ভারগাসের নেয়া ফিরতি শটে তার কিছুই করার ছিল না। বিশ্লেষকরা অবশ্য তার পারফরম্যান্সে মুগ্ধ।
সবমিলিয়ে ডিফেন্স কিংবা মিডফিল্ডে পাশমার্কই পাচ্ছে আর্জেন্টিনা। তবে গোলের খেলা ফুটবলে মূল ভূমিকাটা তো ফরোয়ার্ডদের। সেখানেই ব্যর্থ ১৪বারের কোপা জয়ীরা। শীঘ্রই সেই ব্যর্থতা কাটিয়ে উঠতে না পারলে আরো একবার আক্ষেপেই পুড়তে হবে আর্জেন্টিনাকে।