খুলনায় শহরের পাশাপাশি গ্রামেও এখন করোনাভাইরাসে সংক্রমিতের সংখ্যা বেড়ে চলেছে। শুধু তা-ই নয়, সাম্প্রতিক সময়ে জেলা শহরের চেয়ে উপজেলাগুলোতে সংক্রমণ বৃদ্ধির হার বেশি।
খুলনা জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়ের সবশেষ তথ্যমতে, চলতি জুন মাসের প্রথম ১৬ দিনে খুলনা নগর ও জেলা মিলিয়ে করোনা পজিটিভ শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৮১৮ জনের। এর মধ্যে নগরে শনাক্ত হয়েছে ১ হাজার ৩৪৬ জনের আর ৯টি উপজেলায় শনাক্ত হয়েছে ৪৭২ জনের। এই হিসাবে জুনের ১৬ দিনে জেলার মোট শনাক্তের প্রায় ৭৪ দশমিক শূন্য ৪ শতাংশ নগরে এবং ২৫ দশমিক ৯৬ শতাংশ উপজেলার রোগী। এই সময়ে জেলায় করোনায় সংক্রমিত হয়ে মারা যাওয়া ২৩ জনের মধ্যে নগরের ১১ জন এবং উপজেলার ১২ জন রয়েছেন।
খুলনায় এ পর্যন্ত শনাক্ত হওয়া ১২ হাজার ৪৫ জন করোনা রোগীর মধ্যে নগরের বাসিন্দা ৯ হাজার ৬৬৫ এবং উপজেলাগুলোর বাসিন্দা ২ হাজার ৩৮০ জন। এর মধ্যে নগরে মোট শনাক্তের প্রায় ১৪ শতাংশই শনাক্ত হয়েছে চলতি মাসে। আর উপজেলার মোট শনাক্তের প্রায় ২০ শতাংশ শনাক্ত হয়েছে এই মাসে।
এর আগের ১৬ দিনে (১৬-৩১ মে) মোট শনাক্ত ৭০১ জনের মধ্যে নগরে শনাক্ত ছিল ৫৯৮ জন (৮৫ দশমিক ৩১ শতাংশ) এবং উপজেলায় শনাক্ত হয় ১০৩ জন (১৪ দশমিক ৬৯ শতাংশ)।
তথ্য বিশ্লেষণ করে আরও দেখা গেছে, চলতি মাসের প্রথম ১৬ দিনে আগের ১৬ দিনের তুলনায় নগরে করোনা পজিটিভ রোগী বেড়েছে ১২৫ শতাংশ। বিপরীতে উপজেলাগুলোয় চলতি মাসে করোনা রোগী বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৫৮ শতাংশ বা সাড়ে তিন গুণ।
খুলনার সিভিল সার্জন নিয়াজ মোহাম্মদ এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, উপজেলাগুলোতে গত মাসের শেষ দিক থেকে চলতি মাসজুড়ে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। শহরেই মাস্ক ব্যবহারে ব্যাপক অনীহা আর উপজেলায় তো মাস্কের ব্যবহার নেই বললেই চলে। পারিবারিক-সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ বেড়ে গেছে। স্বাস্থ্যবিধির বিষয়েও উদাসীনতা চোখে পড়ার মতো, এসব কারণেই গ্রামের সংক্রমণ পরিস্থিতি ঊর্ধ্বমুখী।এমন পরিস্থিতিতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে শতভাগ মাস্ক পরা নিশ্চিত করা, বেশি করে টেস্টের আওতায় আনা, হাটবাজারে নজরদারি জোরদার করা, খেয়া পারাপারের সময় ভিড় নিয়ন্ত্রণ করা এবং সর্বোপরি সচেতনতা বাড়ানোর বিকল্প নেই বলে মনে করছেন চিকিৎসকেরা।
খুলনা নগরের বাইরে ৯টি উপজেলার মধ্যে এ পর্যন্ত দাকোপে ২৮১ জন, বটিয়াঘাটায় ১৫৯, রূপসায় ৪৩০, তেরখাদায় ১৬১, দিঘলিয়ায় ২৪৫, ফুলতলায় ৪১২, ডুমুরিয়ায় ২৮৯, পাইকগাছায় ২৯৮ ও কয়রায় ১০৫ জন করোনা রোগী শনাক্ত হয়েছেন। এর মধ্যে গত ১৬ দিনে নতুন রোগী যোগ হয়েছেন দাকোপে ৬৩ জন, বটিয়াঘাটায় ২৩, রূপসায় ৫৮, তেরখাদায় ৪৩, দিঘলিয়ায় ৫৫, ফুলতলায় ১০৮, ডুমুরিয়ায় ৩৬, পাইকগাছায় ৬৭ ও কয়রায় ১৯ জন।
বেশির ভাগ উপজেলায় হঠাৎ করেই বেড়ে গেছে সর্দি-কাশি ও জ্বরে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। উপজেলার প্রায় প্রতিটি পাড়ায় এখন এ ধরনের রোগী থাকলেও করোনা পরীক্ষায় তেমন আগ্রহ নেই। তাঁদের অনেকের ভয়, করোনা পরীক্ষায় পজিটিভ হলে বাড়ি লকডাউন করে দেবে। চলাফেরায় ব্যাপক বাধানিষেধ দেবে প্রশাসন। বেশির ভাগই স্থানীয় বিভিন্ন ফার্মেসি থেকে উপসর্গের কথা বলে ওষুধ কিনে সেবন করছেন। এভাবে ইতিমধ্যে অনেকে সুস্থও হয়ে উঠছেন।
দাকোপ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মিন্টু বিশ্বাস প্রথম আলোকে বলেন, ‘ভ্রাম্যমাণভাবে দৈবচয়নের ভিত্তিতে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট করা হচ্ছে। সেখান থেকে পজিটিভ রোগীও পাওয়া যাচ্ছে। লোকজনকে স্বাস্থ্যবিধি মানার কথা বলছি এবং না মানলে আইনের আওতায় আনছি। একই সঙ্গে হাসপাতালের বাইরে গিয়ে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট বাড়ানোর কথা বলেছি।’
জেলার উত্তরের উপজেলা তেরখাদাতেও সংক্রমণ বাড়ছে। তেরখাদা উপজেলা স্বাস্থ্য কর্মকর্তা মো. আসাদুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আগের চেয়ে শনাক্ত অনেকে বেড়েছে। জ্বর ও সর্দি-কাশি নিয়ে আগের চেয়ে বেশি মানুষ হাসপাতালে আসছেন। হাসপাতালে আসা রোগীর বাইরেও আমরা দৈবচয়নের ভিত্তিতে বাজারঘাট থেকেও নমুনা নিচ্ছি। সেখান থেকেও পজিটিভ পাওয়া যাচ্ছে।’ তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যবিধি মানার পাশাপাশি আক্রান্ত রোগীদের হোম আইসোলেশনটা জরুরি। উপজেলা প্রশাসন ও আমরা স্বাস্থ্য বিভাগ যৌথভাবে সে বিষয়ে কাজ করছি। তবে সব ক্ষেত্রে পুরোপুরি সফল হওয়া যাচ্ছে না।’