আমরা টাঙ্গাইল জেলার কৃষি পণ্য নিয়ে যখন কথা বলতে যাই কিভাবে কিভাবে মধুপুর চলে আসে আমরা একদমই টের পাই না। মধুপুর কিভাবে কৃষি পণ্যে ভরপুর, এতো পণ্যের জায়গাই বা কোথায়।
ছবিতে আমরা একটা জঙ্গল দেখতে পেলেও এই জঙ্গল এই চাষ হচ্ছে কয়েকটি পণ্য। ছবিতে পুরোটা ধরা না গেলেও আমি বলছি এখানে কয়টা পণ্য আছে।
- আনারস
- হলুদ
- কচু
- আলু
- কলা
- মিষ্টিকুমড়া
- ঝাড়ু করার সন।
যেখানে আমরা একটা জমি থেকে এতো এতো পণ্য পাচ্ছি সেখানে মধুপুর কেনো কৃষিপণ্যের রাজা হবে না বলুন তো। প্রতিটি পণ্য যদি আমরা আলাদা আলাদা করে বলতে যাই এই পণ্য গুলো থেকেও রয়েছে নতুন অনেক পণ্যের সম্ভাবনা।
আনারসঃ আনারস গাছ লাগানোর প্রায় ২২মাস পর আনারস হয় গাছে। সেই আনারস পরিপক্ক হতেও লাগে অনেক সময়। কিন্তু খাওয়ার উপযোগী হয় ফুল থেকেই। যখন একটু টকটক হয় তখনই এই আনারস খাওয়া হয় ভাজি ও তরকারি হিসেবে। পরিপক্ক একটা আনারস থেকে তৈরি করা হয় আনারসের চাটনি ও আমসত্বের মতো শুকিয়ে আচারও করা হয়,অন্যদিকে পাইনাপল বিস্কুট ও জুসের প্রাধান্য তো রয়েছেই।
একটি আনারস বিক্রি হয় ৪০-৫০ টাকা দামে।যার ভেতর থেকে অন্যান্য লাভ ও রয়েছে। যেমন একটা আনারসের সাথে তিন থেকে চারটা চারা হয়। যে চারা আবার বিক্রি করা হয় নতুন রেকর্ড আনারস বাগান করার জন্য। সবশেষে যখন আনারসের পুরাতন গাছ গুলি থাকে সেগুলো থেকে তৈরি হচ্ছে গোল্ডেন ফাইবার, শক্ত গুড়ালি কুচি করে তৈরি করা হয় জ্বালানি। মধুপুরের বেশির ভাগ পরিবারের জ্বালানি মানেই এই আনারসের শক্ত অংশ বা গোড়ালি টাই।
তাহলে দেখুন একটা আনারস গাছকে ব্যাবহার করা হয় কয় ভাবে-
- আনারস ফল ( ভাজি, ভর্তা, তরকারি, আচার, জুস )
- আনারসের নতুন চারা, যা থেকে করা হয় আবার নতুন বাগান
- গোল্ডেন ফাইবার
- জ্বালানি
এখন বলি একই বাগানে এতো এতো কৃষি পণ্যের চাষ কিভাবে হয়!!!
একটা আনারস বাগান তৈরি করা হয় আইল হিসেবে। যেখানে এক আইল থেকে অন্য আইলের দুরুত্ব প্রায় ২০-২৫ ইঞ্চি। খুব সহজেই এই আইলের এক পাশে হলুদ, আদা বা কচু লাগানো হয়।
হলুদ ও আদা ব্যবহার হয় মসলা হিসাবে, মধুপুর পাহাড়ি অঞ্চল হওয়ায় এর ফলন ও অনেক ভালো হয়, যার বাজার চাহিদা ও অনেক বেশি।
অন্যদিকে লাগানো হয় গারো কচু, চিন কচু,। যার থেকেও বিভিন্ন ভাবে লাভবান হচ্ছে কৃষক।
যেমন –
- কচু রান্না করে খাওয়া হয়
- আমরা বাজারে যে মুখি পাই এই মুখি পাওয়া যায় গারো কচু থেকে
আনারস বাগানের চারপাশে লাগিয়ে দেওয়া হয় শিমলাই আলুর ডাল, মিষ্টিকুমড়ার বীজ । এছাড়াও যৌথ ফসল হিসেবে থাকে কলা ও সন। প্রতিটি ফসল আমাদের জন্য অনেক বেশি উপকারী। সবজির কথা আমরা জানলেও তেমন ভাবে উঠে আসেনি সনের কথা।
একটা সময় ঘর গুলি সনের তৈরি থাকলেও এখন ঝাড়ু ছাড়া তেমন কিছু করা হয়না সন দিয়ে। নতুন করে বিভিন্ন ক্যাফে গুলি তৈরি হচ্ছে সন দিয়ে। আমরা যখন ই কমার্সে সম্ভাবনার কথা বলবো তখন প্রতি টা পণ্যেই এমন করে চলে আসে মধুপুরের কথা।
যৌথভাবে ফসল চাষ করায় আরও বেশি সম্ভাবনাময় উপজেলা হয়ে উঠছে আমাদের মধুপুর। কৃষি পণ্যের ক্ষণি যেনো আমাদের মধুপুর। এই উপজেলা থেকে খুব সহজেই কৃষি পণ্য নিয়ে কাজ করতে পারে উদ্যোক্তারা। অনেক অনেক বেশি সম্ভাবনাময় একটা উপজেলা মধুপুর।
লেখক : আমিনা আতকিয়া রিতা ; স্বত্বাধিকারী: অপরাজিতা – Oporajita