ব্ল্যাক, হোয়াইট আর ইয়েলো—ভারতের কোভিড রোগীদের মধ্যে এই তিন ধরনের ফাঙ্গাসের সংক্রমণ আগেই শনাক্ত হয়েছে। এসবে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন অনেকেই। ছড়িয়েছে আতঙ্ক। এমনকি দেশটিতে করোনার পাশাপাশি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণকে মহামারি হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এবার ভারতে করোনায় আক্রান্ত একজনের শরীরে ‘গ্রিন ফাঙ্গাস’ সংক্রমণ শনাক্ত হয়েছে। চিকিৎসকেরা বলছেন, করোনাকালে এই ফাঙ্গাস নতুন আতঙ্কের জন্ম দিতে পারে।
আজ বুধবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম এনডিটিভির এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, মধ্যপ্রদেশে ৩৪ বছর বয়সী একজন করোনায় আক্রান্ত রোগীর শরীরে গ্রিন ফাঙ্গাসের উপস্থিতি শনাক্ত হয়েছে। ভারতে এটাই এই ফাঙ্গাসের শনাক্তের প্রথম ঘটনা।
ইন্দোরের শ্রী অরবিন্দ ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের (এসএআইএমএস) বক্ষব্যাধি বিভাগের প্রধান চিকিৎসক রবি দোশি বলেন, এটা ছত্রাকজনিত সংক্রমণের নতুন একটি ঘটনা। এই ছত্রাকের বিষয়ে আরও বিস্তারিত গবেষণার প্রয়োজন রয়েছে। গ্রিন ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হলে রোগীর ফুসফুস ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।
রবি দোশি জানান, ‘দুই মাস আগে করোনায় আক্রান্ত হয়েছিলেন ওই রোগী। তবে তাঁর নাক থেকে রক্ত ঝরা, জ্বরের মতো উপসর্গ রয়ে গিয়েছিল। আমরা ভেবেছিলাম, তিনি ব্ল্যাক ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন। তবে পরীক্ষার পরে দেখা যায়, ওই রোগী ব্ল্যাক নয়, বরং গ্রিন ফাঙ্গাসে আক্রান্ত হয়েছেন। এটা তাঁর ফুসফুস, নসিকা গ্রন্থি ও রক্তে ছড়িয়েছে।’
এর আগে ভারতে করোনায় আক্রান্ত হওয়ার পরে রোগীদের ব্ল্যাক, হোয়াইট ও ইয়েলো ফাঙ্গাসে সংক্রমিত হওয়ার খবর মিলেছিল। এর মধ্যে ভয়াবহ ও প্রাণঘাতী হলো মিউকরমাইকোসিস বা ব্ল্যাক ফাঙ্গাস। দেশটির চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, এটি রোগীদের মুখ, নাক, চোখে, ফুসফুস ও মস্তিষ্কে ছড়িয়ে যায়। এতে আক্রান্ত হলে মানুষ দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারে। এমনকি মৃত্যুর কারণ হতে পারে এই ফাঙ্গাস।
দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সায়েন্সের (এআইআইএমএস) প্রধান ডা. রনদীপ গুলেরিয়া গত মাসে জানিয়েছেন, কোন এলাকায় ছড়িয়েছে ও রঙের বিবেচনায় অনেক সময় একই ফাঙ্গাসের আলাদা আলাদা নাম দেওয়া হয়। এটা নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর অবকাশ রয়েছে। চিকিৎসা এগিয়ে নিতে এই বিভ্রান্তি দূর করা প্রয়োজন।
উল্লেখ্য, মিউকরমাইকোসিস একটি বিরল সংক্রমণ। মিউকর নামে একটি ছত্রাকের সংস্পর্শে এলে এ সংক্রমণ হয়। সাধারণত মাটি, গাছপালা, পচনশীল ফল ও শাকসবজিতে এ ছত্রাক দেখা যায়। এআইআইএমএস জানিয়েছে, মিউকরমাইকোসিস মুখে আক্রমণ করতে পারে। নাক, চোখ ও মস্তিষ্কে এর সংক্রমণ ঘটতে পারে। এ সংক্রমণে সাইনাসের ব্যথা, এক নাক বন্ধ হয়ে যাওয়া, মাথার এক পাশে ব্যথা, ফুলে যাওয়া, দাঁতে ব্যথাসহ নানা উপসর্গ দেখা দেয়। সংক্রমণে রোগী দৃষ্টিশক্তি হারাতে পারেন।
এআইআইএমএস আরও জানিয়েছে, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের সংক্রমণ ফুসফুসেও ছড়িয়ে পড়তে পারে। বিশেষত ডায়াবেটিস রয়েছে ও নিয়মিত স্টরয়েড নেন, এমন কোভিড পজিটিভ রোগীদের এ ছত্রাকে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি। কেননা, স্টেরয়েডের অপব্যবহার কোভিড-১৯ রোগীদের মধ্যে মিউকরমাইকোসিসের সংক্রমণ বাড়িয়ে দিতে পারে। এতে রোগীর মৃত্যুও হতে পারে।
এদিকে ভারতের হরিয়ানার পারাস হাসপাতালের রেসপিরেটরি মেডিসিন বিভাগের প্রধান অরুনেশ কুমার বলেন, ব্ল্যাক ফাঙ্গাসের তুলনায় হোয়াইট ফাঙ্গাস বেশি বিপজ্জনক। শরীরে রোগ প্রতিরোধক্ষমতা কম হলে এই ফাঙ্গাসের সংক্রমণ হয়। স্যাঁতসেঁতে পরিবেশে থাকলে এতে সংক্রমিত হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
অরুনেশ কুমার আরও বলেন, হোয়াইট ফাঙ্গাসে সংক্রমিত রোগীর কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর মতোই উপসর্গ দেখা দেয়। তবে কোভিড পরীক্ষায় এমন রোগীর ‘নেগেটিভ’ আসে। এক্স-রে কিংবা সিটি স্ক্যানের মাধ্যমে এই সংক্রমণ নিশ্চিত হওয়া যেতে পারে। হোয়াইট ফাঙ্গাস শুধু ফুসফুসকে ভোগায় না। নখ, চামড়া, পাকস্থলী, কিডনি, মস্তিষ্ক, গোপনাঙ্গ, মুখসহ শরীরের বিভিন্ন অঙ্গপ্রত্যঙ্গ এই ফাঙ্গাসের আক্রমণে ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।