করোনা নিয়ন্ত্রণে ভারতের টিকা নীতি নিয়ে বিতর্ক চলছেই। নতুন বিতর্ক সৃষ্টি হয়েছে পুনের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত অ্যাস্ট্রাজেনেকার তৈরি টিকা কোভিশিল্ডের দুটি ডোজের মধ্যবর্তী সময়সীমাকে কেন্দ্র করে।এ বিষয়ে ভারত সরকারের গঠিত টিকাসংক্রান্ত ন্যাশনাল টেকনিক্যাল অ্যাডভাইজারি গ্রুপ অন ইমুনাইজেশনের (এনটিএজিআই) প্রধান এন কে অরোরার দাবি মানতে অস্বীকার করেছেন এর অন্য তিন বিশেষজ্ঞ। তাঁরা বলেছেন, দুই ডোজের মধ্যবর্তী ব্যবধান বাড়িয়ে তাঁরা তিন মাস করার বিষয়ে সহমত পোষণ করেছিলেন। চার মাস নয়।
নতুন এ বিতর্ক চাপা দিতে কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী হর্ষবর্ধন বুধবার টুইট করে বলেন, মধ্যবর্তী ব্যবধান বাড়ানোর সিদ্ধান্ত স্বচ্ছ ও বিজ্ঞানভিত্তিক পরিসংখ্যানের ওপর ভিত্তি করেই গৃহীত। তথ্য-উপাত্ত মূল্যায়ন করে দেখার ব্যবস্থা দেশে রয়েছে। দুর্ভাগ্যের বিষয় এই যে এ নিয়ে অযথা রাজনীতি হচ্ছে।
বিতর্কের সূত্রপাত তিন টিকা বিশেষজ্ঞের মতামত জানাজানি হওয়া থেকে। সংবাদ সংস্থা রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বিশেষজ্ঞদের উদ্ধৃতি দিয়ে বলা হয়, কোভিশিল্ডের দুই টিকার ব্যবধান দুই মাস থেকে বাড়িয়ে তিন মাস করার বিষয়ে তাঁরা রাজি হয়েছিলেন। সরকার পরিচালিত ‘ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব এপিডেমিওলজি’র সাবেক পরিচালক এম ডি গুপ্তের মতে, তাঁরা ব্যবধান তিন মাস করার বিষয়ে সহমত পোষণ করেছিলেন। তিনি বলেছেন, ‘চার মাস করাটা ঠিক হতে পারে, না–ও হতে পারে।
আমাদের কাছে কোনো তথ্য নেই।’ একই অভিমত এনটিএজিআইর অন্য দুই বিশেষজ্ঞ ম্যাথু ভার্গিস ও জি পি মুলিইলেরও। ভার্গিস রয়টার্সকে বলেন, সিদ্ধান্ত হয়েছিল ব্যবধান ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ করার। মুলিইল বলেন, ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ করার বিষয়ে সেভাবে আলোচনা হয়নি। রয়টার্স জানায়, এন কে অরোরা ওই তিন বিশেষজ্ঞের মতামত সম্পর্কে কোনো টিপ্পনী না করে শুধু বলেছেন, সব সিদ্ধান্তই ছিল সম্মিলিত।
দেশে কোভিড টিকা আসার সময় প্রথমে ঠিক ছিল কোভিশিল্ডের দুই ডোজের ব্যবধান হবে ৬ থেকে ৮ সপ্তাহ, কোভ্যাকসিনের ২৮ থেকে ৩৫ দিন। কোভ্যাকসিন তার ব্যবধান অপরিবর্তিত রাখলেও কোভিশিল্ডের ব্যবধান বারবার বদল হয়েছে। প্রথম বদল হয় ৮ থেকে ১২ সপ্তাহ। পরে ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ।
বুধবার সরকারের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে এন কে অরোরা ব্যবধান বাড়ানোর এ সিদ্ধান্তের বিস্তারিত ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তাতে বলা হয়েছে, চলতি বছরের এপ্রিল মাসে যুক্তরাজ্যের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পরীক্ষায় দেখা যায়, দুই টিকার ব্যবধান ৮ থেকে বাড়িয়ে ১২ সপ্তাহ করা হলে কার্যকারিতা ৬৫ থেকে ৮৮ শতাংশ বেড়ে যাচ্ছে। এন কে অরোরা বলেন, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষার ওপর ভিত্তি করেই ওই সিদ্ধান্তে যুক্তরাজ্যের বিশেষজ্ঞরা উপনীত হয়েছিলেন। ফলে সেই সিদ্ধান্তই তাঁরা কার্যকর করে ব্যবধান ১২ থেকে ১৬ সপ্তাহ করেছেন। তিনি আরও বলেন, ‘এক মাস বাড়তি সময় দেওয়া হয় যাঁরা ঠিক সময়ে আসতে পারবেন না তাঁদের কথা ভেবে। এর আগে তাঁরা ব্যবধান এক মাস থেকে বাড়িয়ে দুই মাস করেছিলেন। কারণ, এক মাস পর টিকার কার্যকারিতা ছিল ৫৭ শতাংশ, দুই মাস পর তা বেড়ে হয় ৬০ শতাংশ।’
সরকারি ব্যাখ্যা যা–ই হোক, কোভিশিল্ডের ব্যবধান সেই সময় বাড়ানো হয়েছে, যখন দেশজুড়ে টিকার হাহাকার। পরিস্থিতির মোকাবিলায় টিকা রপ্তানি বন্ধ করে দেওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। তাতে সমস্যায় পড়েছে বাংলাদেশ ও নেপালের মতো প্রতিবেশীরা। তারা টিকার জন্য ভারতকে ফরমাশ দিয়েছিল।
টিকা দেওয়ার সময়ের ব্যবধান নিয়ে তিন বিশেষজ্ঞের বিরুদ্ধ অভিমত টিকা বিতর্কের অন্য এক দুয়ার খুলে দিল। গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের মেডিকেল উপদেষ্টা অ্যান্টনি ফাউচি এনডিটিভিকে বলেছিলেন, দুই টিকার ব্যবধান অত্যধিক বাড়ানো হলে মানুষকে নতুন ধরনের আগ্রাসী সংক্রমণের মুখোমুখি দাঁড়াতে হতে পারে।