প্রাণহানি নয় সুস্থভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন চাই: গয়েশ্বর

বাংলাদেশ

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেছেন, আমরা যুগে যুগে শুধু মার খাব না। এজন্য দেশ স্বাধীন করিনি। কেউ আঘাত করলে পালটা জবাব দেওয়ার জন্য প্রস্তুত থাকতে হবে। তিনি বলেন, আমরা কোনো প্রাণহানি চাই না। আমরা সুস্থভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন চাই, পদত্যাগ চাই। 

বৃহস্পতিবার রাজধানীর গুলিস্তানে মহানগর নাট্যমঞ্চে এক সভায় তিনি এসব কথা বলেন। বিএনপির ৪৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষ্যে এ সভার আয়োজন করা হয়। 

গয়েশ্বর চন্দ্র রায় আরও বলেন, ‘শেখ হাসিনার (প্রধানমন্ত্রী) পতনের জন্য শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত মাঠে থাকব। তার পতনের আগে চিতায় উঠব না। পতন করেই চিতায় উঠব।’ তিনি বলেন, এ প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আমি আনন্দিত নই। কারণ যাকে ঘিরে সব সেই নেত্রী খালেদা জিয়া আজ অনুপস্থিত। তাকে বন্দি রেখে বলা হচ্ছে-কে হবেন প্রধানমন্ত্রী? সেটা বিষয় নয়। বিষয় হলো-তাকে মুক্তি দিতে হবে। 

গয়েশ্বর বলেন, ‘প্রধান বিচারপতি বিদায় বেলায় বললেন-বিচার বিভাগ যেন রাজনীতির ঊর্ধ্বে থাকে। তাহলে আপনি কি বলতে পারবেন যে খালেদা জিয়া কোন আইনে জামিন পেলেন না? আপনি তো দায়িত্বে ছিলেন।’

আদালতে গেলে ম্যাজিস্ট্রেটের ভাব দেখলে অবাক হই। যে মামলার পরবর্তী তারিখ ১ থেকে দেড় মাস পর দেওয়ার কথা সেখানে কদিন পরপর তারিখ নির্ধারণ করা হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, ‘মনে হয়-আমাদের আর বেশিদিন কোর্টে যাওয়া লাগবে না। কোর্টে যাবেন শেখ হাসিনা (প্রধানমন্ত্রী)। কিন্তু আগেই যাওয়ার বিষয়টা জানাচ্ছে না।’

নেতাকর্মীদের উদ্দেশে গয়েশ্বর বলেন, ‘আপনারা এত সংশয়ে আছেন কেন? তিনি (প্রধানমন্ত্রী) ক্ষমতা থেকে যাবেন। তবে কবে যাবেন তিনি ছাড়া দলের অন্য কোনো লোক জানেন না। এ লুটেরাদের নিয়ে তিনি ক্ষমতায় থাকতে পারবেন না-এটা পরিষ্কার।’

তিনি বলেন, আমরা সুুস্থভাবে ক্ষমতার পরিবর্তন চাই, পদত্যাগ চাই। আমরা একটা প্রাণহানিও চাই না।

স্থায়ী কমিটির আরেক সদস্য ড. আবদুল মঈন খান বলেন, শত নির্যাতনের মাঝেও গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় আমরা রাজপথে আছি। কেন থাকতে পারছি-মূল শক্তি বিশ্বাস। তা হলো-জনগণ। ‘জিয়াউর রহমান বলেছেন-জনগণই সব ক্ষমতার উৎস। তিনি কখনো বলেননি বন্দুকের নল থেকে ক্ষমতা বের হয়।’ 

স্থায়ী কমিটির সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, সদ্য বিদায়ি প্রধান বিচারপতি যে বক্তব্য দিয়েছেন তাতে বিচার বিভাগের কি অবস্থা সেটা ফুটে উঠেছে। অর্থাৎ তার বক্তব্য একটা কঠিন বার্তা। সেটা বিশ্ববাসী ও বাংলাদেশের মানুষের জন্য। সরকার গুম, খুনের হোতা। তারা দুর্নীতিবাজ। এ কারণে ব্রিকসের সদস্য হতে পারেনি। অথচ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছিলেন বাংলাদেশ ব্রিকসের সদস্য হচ্ছে। সরকার পরাজিত হয়েছে। তারা সব জায়গা থেকে প্রত্যাখ্যাত হচ্ছে। শুধু ব্রিকস নয়, বিশ্বের কোথাও তাদের জায়গা হবে না।’

সরকারকে উদ্দেশ করে তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশের মানবাধিকার, গণতন্ত্র, অর্থনীতি নিয়ে প্রতিদিন আলোচনা হচ্ছে। সুতরাং দেওয়ালের লিখন পড়ুন। জনগণের মনের ভাষা বুঝে বিদায় নিন। দেশটাকে মুক্ত করুন। বাকি ব্যবস্থা দেশের মানুষ নেবে। কারণ সংবিধান মোতাবেক দেশের মালিক তো জনগণ। আমরাও সংবিধান মোতাবেক নির্বাচন চাই। সেটা হতে হবে-মানুষের ইচ্ছার ভিত্তিতে। কিন্তু সরকার যা করছে তা তো মানুষের ইচ্ছার সঙ্গে যায় না। ভাওতাবাজি করে লাভ হবে না।

ড. আব্দুল মঈন খানের সভাপতিত্বে ও প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানির পরিচালনায় সভায় বক্তব্য দেন স্থায়ী কমিটির সদস্য সেলিমা রহমান, ভাইস চেয়ারম্যান ব্যারিস্টার শাহজাহান ওমর, বরকতউল্লা বুলু, আবদুল আউয়াল মিন্টু, ডা. এজেডএম জাহিদ হোসেন, শামসুজ্জামান দুদু, নিতাই রায় চৌধুরী, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আবদুস সালাম, আমানউল্লাহ আমান, কেন্দ্রীয় নেতা খায়রুল কবির খোকন, জহির উদ্দিন স্বপন প্রমুখ।

এছাড়া উপস্থিত ছিলেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী, কেন্দ্রীয় নেতা তাইফুল ইসলাম টিপু, আসাদুল করিম শাহিন, মুক্তিযোদ্ধা দলের ইশতিয়াক আজিজ উলফাত, যুবদলের সুলতান সালাউদ্দিন টুকু, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ওলামা দলের শাহ মো. নেছারুল হক প্রমুখ।