ফ্রি ফায়ার গেমস খেলতে ঘণ্টা হিসাবে মোবাইল ভাড়া

বাংলাদেশ

রাজধানীর পল্লবীর বাউনিয়াবাঁধে ভাড়ায় মিলছে ফ্রি ফায়ার গেমস খেলার মোবাইল। এ জন্য যত্রতত্র গড়ে উঠেছে ভিডিও গেমসের দোকান। এ সব দোকানে ঘণ্টা হিসাবে মোবাইল ভাড়া দেওয়া হয়। স্কুল বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা মোবাইলে ফ্রি ফায়ার গেমসে ব্যস্ত থাকে।  প্রতি ঘণ্টায় গেমসের মোবাইল ভাড়া দেওয়া হচ্ছে ৮০ থেকে ১০০ টাকায়। আর প্রতি গেমে ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। স্থানীয়রা বলেছেন, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় শিক্ষার্থীদের ফ্রি ফায়ার গেমেসের প্রতি আসক্তি জন্মেছে।  এ জন্য তারা যত্রতত্র গড়ে ওঠা ভিডিও গেমসের দোকানকে দায়ী করছেন। 

সরেজমিনে বৃহস্পতিবার পল্লবীর ১১ নম্বর বাউনিয়াবাঁধ ঘুরে দেখা যায়, সুরভী স্কুল, আইডিয়াল হাইস্কুল ঘিরে এ-ব্লক, ই-ব্লক ও ডি-ব্লকে ৫০ টির মতো ফ্রি ফায়ার গেমস খেলার দোকান গড়ে উঠেছে। প্রত্যেক দোকানে ২৫-৩০ টি মোবাইল রয়েছে।  ফ্রি ফায়ার খেলার জন্য এসব মোবাইল ঘণ্টা অথবা প্রতি গেম হিসাবে ভাড়া দেওয়া হয়। অনেক শিক্ষার্থী খেলার টাকা জোগাড় করতে না পেরে বাসা থেকে টাকা চুরি করে।  টিফিন কিংবা জাম-কাপড় কেনার কথা বলে এ টাকা দিয়ে ফ্রি ফায়ার গেমস খেলে।  এ জন্য মাঝেমধ্যে ভুক্তভোগী পরিবার ও ভিডিও গেমস  দোকান মালিকরা বাকবিতণ্ডায় জড়িয়ে পড়ে। অনেক সময় হাতাহাতির ঘটনাও ঘটে। গত ২ দিন আগে বাউনিয়াবাঁধ এলাকার ভিডিও গেমসের সবচেয়ে বড় দোকান মালিক জুলহাসের সঙ্গে এক ভুক্তভোগী পরিবারের বচসা হয়।  

বাউনিয়াবাঁধ আইডিয়াল হাইস্কুলের সিনিয়র এক শিক্ষক নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেছেন মোবইলের গেমস খেলার দোকান বন্ধ না হলে শিক্ষার্থীদের ভবিষ্যৎ অন্ধকার। অনেকে প্রাইভেট পড়ার কথা বলে বাসা থেকে বের হয়। অথচ সেখানে না গিয়ে দোকানে মোবাইলে গেমস খেলে। স্কুল বন্ধ থাকায় বাচ্চাদেরও ঠিকমতো শাসন করতে পারছি না। অভিভাকরা সতর্ক না হলে মোবাইলে গেমস খেলার আসক্তির কারণে তাদের মস্তিষ্ক ও চোখে বিরাট প্রভাব ফেলবে।  

স্থানীয় বাসিন্দা রকি বলেন, বাউনিয়াবাঁধে গেমস খেলার জন্য মোবাইল ভাড়া পাওয়া যায়। শিক্ষার্থীরা  সারা দিন দোকানে বসে মোবাইলে গেমস খেলে। কি করবে স্কুল-কলেজ বন্ধ।  অনেকে বাসা থেকে টাকা চুরি করে। সে টাকা দিয়ে এখানে মোবাইলে গেমস খেলে। অনেকে বাবা-মায়ের সঙ্গে বায়না ধরে টাকা আদায় করে এখানে আসে। অনেক সময় খেলতে খেলতে সারাদিন পার হয়ে যায়। অনেক শিক্ষার্থীদের কাছে এটি নেশার মতো হয়ে গেছে। অনেক অভিভাবক ছেলে-মেয়েকে না পেয়ে এখানে এসে দেখেন তারা মোবাইলে গেমস খেলায় ব্যস্ত। এতে পারিবারিক অশান্তিও বেড়েছে।  
 
একটি  বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা জাহিদ বলেন আমার সন্তান ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে পড়ে। স্কুল বন্ধ থাকায় এলাকায় গড়ে উঠে ফ্রি ফায়ার গেমসের দোকান। সেখানে সারাক্ষণ টাকা দিয়ে গেমস খেলে। বাসার আলমারি থেকে টাকা নিয়ে গেমসের দোকানে যায়। দোকানদারকে নিষেধ করলে বলে আমি কি আপনার সন্তানকে দাওয়াত দিয়ে নিয়ে আসছি। চারদিকে গেমসের দোকানের ছড়াছড়ি। ছেলেকে কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করতে পারছি না। দোকানগুলো বন্ধ থাকলে আমরা অভিভাবকরা উপকৃত হতাম। প্রয়োজনে আপনারা রাতে এসে দেখতে পারেন কিভাবে বাচ্চারা গেমস খেলে সময় নষ্ট করছে। 

কামাল নামে স্থানীয় বাসিন্দা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফ্রি ফায়ার গেমস নিয়ে একটি মন্তব্য করেছেন।  তিনি লিখেছেন, সাবাধান হয়ে যান যারা ফ্রি ফায়ার নিয়ে বিজনেস করছেন। ছোট ছোট বাচ্চাদের কাছে মোবাইল ভাড়া দিয়ে ফ্রি ফায়ার খেলা বন্ধ করুন। আদেশ ক্রমে বাউনিয়াবাঁধ যুব সমাজ।    
 

এ দিকে অনেকে অন্য ব্যবসার আড়ালে ভিডিও গেমসের ব্যবসা করছেন। এ জন্য তারা ভিডিও গেমসের দোকানের সামনে মুদি, স্টেশনরি কিংবা জামা-কাপড় আয়রন করার মালামাল রেখেছেন। যাতে বাইর থেকে দেখে কেউ বুঝতে না পারে ভেতরে মোবাাইলের গেমস চলছে।  

ডিএনসিসির ৫ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুর রউফ নান্নু বলেন, আমি অনেকবার প্রশাসনকে বলেছি ব্যবস্থা নিতে।  অভিভাবকদেরও এ ব্যাপারে সতর্ক হতে হবে। 

পল্লবী থানার ওসি পারভেজ ইসলাম বলেন, কোন কোন এলাকায় খেলা হয়,  ঠিকানা দেন।  সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেব।