হাত বাড়িয়ে দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। সে হাত ধরলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন। বুধবার জেনেভা ভিলার বাইরে করমর্দনের মাধ্যমেই আলোচিত সম্মেলন শুরু করলেন দুই প্রেসিডেন্ট। যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার দীর্ঘ উত্তেজনার মধ্যেই দুই প্রেসিডেন্ট পারস্পরিক বোঝাপড়ার লক্ষ্যে আলোচনা করছেন।
সম্মেলন আয়োজক সুইজারল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট গাই পারমেলিন সম্মেলনের সূচনা করার পর বাইডেন-পুতিন হাত মেলান।
সম্মেলনে দুই দেশের শীর্ষ কূটনীতিকদের নিয়ে দুই প্রেসিডেন্ট যখন আলোচনায় বসছেন, তখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে বাইডেন বললেন, ‘সরাসরি দেখা হওয়াটা সব সময়ই ভালো।’
মস্কো ও ওয়াশিংটনের মধ্যে সর্বোচ্চ উদ্বেগের মধ্যেই দুই প্রেসিডেন্টের এ সাক্ষাতে ইতিবাচক অনেক দিক দেখতে পাচ্ছেন বিশেষজ্ঞরা। এই সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে দুই নেতার মধ্যে বিস্তারিত আলোচনা হবে। এসব গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুর মধ্যে রয়েছে সাইবার হামলা, মানবাধিকার, ইউক্রেন, বেলারুশ প্রভৃতি প্রসঙ্গ।
আলোচনার শুরুতে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনও ইতিবাচক দিকটিই তুলে ধরেছেন। তিনি বলেছেন, ফলপ্রসূ আলোচনাই হতে যাচ্ছে।
রয়টার্স জানায়, দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীদের নিয়ে বাইডেনের পাশে বসে পুতিন তাঁকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেছেন, ‘মি. প্রেসিডেন্ট, আমি আপনাকে আজকের আলোচনার উদ্যোগ নেওয়ার জন্য ধন্যবাদ জানাই।’
বাইডেন বলেছেন, দুই নেতা সহযোগিতা ও পারস্পরিক স্বার্থের বিষয়গুলো নির্ধারণ করার চেষ্টা করবেন।
জেনেভা লেকমুখী দৃষ্টিনন্দন ভিলায় বুধবার জেনেভার স্থানীয় সময় বেলা একটায় বাইডেন ও পুতিনের মধ্যে বৈঠক শুরু হয়। দুই নেতার মধ্যকার বৈঠকটি চার থেকে পাঁচ ঘণ্টা টানা চলার কথা। এতে খাবারের কোনো বিরতি রাখা হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের এক কর্মকর্তা বলেছেন, আলোচনা টানা চলবে। খাবারের কোনো বিরতি নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর বাইডেন এই প্রথম পুতিনের সঙ্গে মুখোমুখি বৈঠকে বসলেন। তাঁদের এই বৈঠক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়াসহ আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমে জোর আলোচনা চলছে। এর আগে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া আলোচনা করে জেনেভাকে সম্মেলনস্থল হিসেবে ঠিক করে।
বিষয়টি স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার আরেক সম্মেলনকে স্মরণ করিয়ে দেয়। ১৯৮৫ সালে মিখাইল গর্বাচেভ ও রোনাল্ড রিগ্যান জেনেভায় ওই একই ভিলায় বৈঠকে অংশ নেন। তবে এবারের সম্মেলনে ওই সময়কার মতো কৌশলগত পারমাণবিক অস্ত্র এবং প্রতিযোগিতামূলক মতাদর্শ নিয়ে উত্তেজনা কম।বাইডেন ও পুতিনের বৈঠকে বিভিন্ন ইস্যুতে আলোচনা হবে বলে উভয় দেশের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। এসব ইস্যুর মধ্যে থাকতে পারে যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনে হস্তক্ষেপ, সাইবার হামলা, মানবাধিকার, ইউক্রেন, বেলারুশ, কৌশলগত স্থিতিশীলতা, আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত, অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ, করোনা মহামারি, জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি।
বৈঠকের প্রাক্কালে গত সোমবার বাইডেন বলেছেন, ‘আমি রাশিয়ার সঙ্গে সংঘর্ষে যাচ্ছি না। তবে রাশিয়া যদি তাদের ক্ষতিকর কর্মকাণ্ড চালিয়ে যায়, তবে আমরা তার জবাব দেব।’
গত সোমবার ন্যাটোর বৈঠক শেষে মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বৈঠক নিয়ে বলেছিলেন, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সীমা নির্ধারণ করে দেবেন তিনি। তিনি ওই সময়ে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট তাঁর যোগ্য প্রতিপক্ষ হিসেবেও উল্লেখ করেছিলেন। তিনি পুতিনকে ‘কঠোর’ নেতা হিসেবেও উল্লেখ করেন।
পশ্চিমা মিত্রদের দূরত্ব কমানোর বার্তা নিয়ে ইউরোপ সফর করছেন জো বাইডেন। তিনি জি-৭ সম্মেলন ও ন্যাটোর বৈঠকে অংশগ্রহণের পর মঙ্গলবার জেনেভার পৌঁছান।
সম্মেলন শুরুর আগে এক সাক্ষাৎকারে যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন রয়টার্সকে বলেছিলেন, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনকে কিছু কড়া বার্তা দিতে পারেন।
ক্রেমলিনের পক্ষ থেকে আগেই বলা হয়েছে, রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যকার সম্পর্কের বর্তমান অবস্থা ও ভবিষ্যৎ নিয়ে উভয় দেশের প্রেসিডেন্ট আলোচনা করবেন। তাঁরা আলোচনা করবেন কৌশলগত স্থিতিশীলতার বিভিন্ন ইস্যু নিয়ে। বিভিন্ন আঞ্চলিক দ্বন্দ্ব-সংঘাত নিরসনের উপায় নিয়ে তাঁরা কথা বলবেন। করোনা মহামারি মোকাবিলাসহ আন্তর্জাতিক সমস্যা নিয়ে তাঁরা বৈঠকে আলাপ করবেন।
খুব কম বিশেষজ্ঞই বাইডেন-পুতিন বৈঠক থেকে নাটকীয় কোনো ফল আশা করছেন। কেননা, বাইডেন কেবল ক্রেমলিনের সঙ্গে একটি কার্যনির্বাহী সম্পর্ক স্থাপন করতে চান। অন্যদিকে রাশিয়া ঠিক কী চায়, তা অস্পষ্ট।