একটি সুস্থ সন্তান পৃথিবীতে আসবে এটি কোন মায়ের না চাওয়া। কিন্তু অনেক সময় অন্ত:সত্ত্বাদের অনাকাঙ্ক্ষিত গর্ভপাতের ঘটনাও ঘটে। অনেকের আবার বারবার এই সমস্যা দেখা দেয়। এমনটি হলে মায়েরা ভেঙে পড়েন। আবার অনেকে নতুন করে আশায় বুকও বাধেন।
গর্ভপাতের কারণ ও করণীয় নিয়ে পরামর্শ দিয়েছেন বিআরবি হাসপাতালের গাইনি ও প্রসূতি বিভাগের কনসালটেন্ট ডা. শাহিনা বেগম শান্তা।
অনেক দম্পতিই আমাদের কাছে আসেন, পুনঃপুনঃ গর্ভপাতের সমস্যা নিয়ে আর আশায় বুক বাঁধেন, নিশ্চয়ই একদিন সুস্থ একটি সন্তানের মুখ দেখতে পাবেন। কিছু কারণ, যা অ্যাবরশন বা গর্ভপাতের কারণ হতে পারে।
প্রায় ৫০ শতাংশ ক্ষেত্রেই গর্ভপাতের কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যায় না। সব পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর যখন কোনো কারণ আমরা খুঁজে পাই না, তখনই অজ্ঞাতনামা হিসাবে বলে থাকি। এদের যে কোনো সময় একটি সুস্থ বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
হরমোনজনিত সমস্যা : অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, অনিয়ন্ত্রিত থাইরয়েড হরমোন, প্রোলাকটিন হরমোন যদি বেশি থাকে ও প্রজেস্টেরন হরমোনের ঘাটতি থাকলে অ্যাবরশন হতে পারে। সেক্ষেত্রে হরমোনের ডাক্তার দেখিয়ে চিকিৎসা নিতে হবে ও গর্ভাবস্থায় প্রজেস্টেরন হরমোন নিতে হবে।
ক্রোমোজমের ত্রুটি : বাবা-মায়ের ক্রোমোজমের যদি কোনো ত্রুটি থাকে, তা গর্ভস্থ সন্তানের মাঝেও থাকতে পারে, সেক্ষেত্রে বারবার অ্যাবরশন হতে পারে। বাবা-মায়ের ক্রোমোজমের পরীক্ষা করলে তা ধরা পড়ে। আবার কখনও কখনও গর্ভস্থ সন্তানও ক্রোমোজমের ত্রুটি নিয়ে জন্মায়, বাবা-মা একদম সুস্থ। মায়ের বয়স ৩৫ বা তার বেশি হলে এমন হওয়ার আশঙ্কা বেশি থাকে। এটা নিশ্চিত হওয়ার জন্য অ্যাবরশন হওয়ার পরে, সেখান থেকে টিস্যু নিয়ে পরীক্ষা করলে নিশ্চিত হওয়া যাবে। উভয়ক্ষেত্রেই আইভিএফ বা টেস্ট টিউব বেবি চিকিৎসার সহায়তা নিতে হবে। ভ্রূণ হতে কোষ নিয়ে ক্রোমোজম পরীক্ষা করে নিশ্চিত হয়ে সুস্থ ভ্রূণ প্রতিস্থাপন করা যেতে পারে।
অ্যান্টি-ফসফোলিপিড সিনড্রোম ও থ্রম্বোফিলিয়া : এ ক্ষেত্রে রক্তের ঘনত্ব বেশি থাকে। গর্ভাবস্থায় রক্ত জমাট বেঁধে যায়, ছোট ছোট রক্তনালিতে রক্ত সরবরাহ বাধাপ্রাপ্ত হয়। ফলে ভ্রূণও প্রয়োজনীয় রক্ত সরবরাহ পায় না ও একসময় হার্টবিট বন্ধ হয়ে যায়। বারবার মিসড অ্যাবরশন হলে এ রকম কারণ চিন্তা করতে হবে। এ সমস্যা হতে গর্ভাবস্থায় উচ্চরক্তচাপও হতে পারে। এ সমস্যা নির্ণীত হলে অ্যাসপিরিন ও লো মলিকুলার ওয়েট হেপারিন নিতে হবে।
জরায়ুর আকৃতিগত ত্রুটি : জরায়ুতে কোনো টিউমার, জরায়ুর ভেতর পর্দা, জন্মগতভাবে জরায়ুর আকৃতিগত কোনো সমস্যা, জরায়ুমুখের দুর্বলতা ইত্যাদি কারণেও বারবার গর্ভপাত হতে পারে। এসব কারণের জন্য গর্ভপাত হলে সাধারণত ৩ মাস পার হয়ে যাওয়ার পর হয় কিংবা সময়ের অনেক আগেই প্রসববেদনা শুরু হয়ে যায়। এ ক্ষেত্রে টিউমার বা পর্দা অপারেশন করে কেটে ফেলতে হবে। জরায়ুমুখ দুর্বলতার জন্য সারভাইকেল সারক্লেজ (Cervical Cerclage) অপারেশন করতে হবে। আকৃতিগত ত্রুটিও কখনো কখনো অপারেশন করে ঠিক করে দেওয়া যায়।
জীবনযাপনের ত্রুটি : ধূমপান, মদ্যপান, স্থূলতা, ঝুঁকিপূর্ণ পেশা, পরিবেশ দূষণ ইত্যাদি কারণেও গর্ভপাত হতে পারে। স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করতে হবে, ওজন কমাতে হবে ও প্রয়োজনে পেশার পরিবর্তন করতে হবে।
ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর গুণগতমানের সমস্যা : ডিম্বাণু ও শুক্রাণুর গুণগতমানের সমস্যা থাকলেও গর্ভপাত হবে। কিছু অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট ও ভিটামিন দেওয়া যেতে পারে। চিকিৎসাতে যদি উন্নতি না হয়, আইভিএফ বা টেস্ট টিউব বেবি চিকিৎসার সহায়তা লাগতে পারে।
যেসব দম্পতিরা বারবার গর্ভপাতের সমস্যায় ভুগে থাকেন, তারা মানসিকভাবে খুব দুর্বল ও হতাশ হয়ে থাকেন। নানা রকম উদ্বিগ্নতা তাদের ঘিরে। যথাযথ কাউন্সেলিং, মানসিক সাপোর্ট ও চিকিৎসা তাদের মুক্তি দিতে পারে হতাশা থেকে আর শোনাতে পারে আশার কথা।