বিষণ্নতায় ভুগছে সিঙ্গাপুরের শিশুরা

আন্তর্জাতিক

বিশ্বে শিক্ষা ক্ষেত্রে প্রথম সারিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম সিঙ্গাপুর।

সিঙ্গাপুরে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ আবার বেড়েছে। সেখানকার বেশ কিছু স্কুল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিশুদের ওপর করোনা ভাইরাসের দীর্ঘস্থায়ী প্রভাবের ওপর দেশটির শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোয় বাড়তি মনোযোগ দেওয়া হচ্ছে।

মহামারির আগে সিঙ্গাপুরে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষায় মানসিক স্বাস্থ্য নিয়ে খুব বেশি আলোচনা হয়নি। তবে এখন বদলে যাওয়া পরিস্থিতিতে মানসিক স্বাস্থ্য ইস্যুতে কাজ চলছে।

গত মে মাসের শেষ দিকে এসব স্কুলের শিক্ষার্থীরা আবার অনলাইন ক্লাসে ফিরে যেতে বাধ্য হয়েছে। ১০ দিন পর্যন্ত অনলাইন ক্লাস করেছে এই শিশুরা। সিঙ্গাপুরে পড়াশোনার ক্ষেত্রে তীব্র প্রতিদ্বন্দ্বিতার মুখে পড়তে হয় শিক্ষার্থীদের। ফলে, অনলাইনে ক্লাসের সময় অনেক শিক্ষার্থী পিছিয়ে পড়ে। পড়াশোনা নিয়ে অনেকেই উদ্বেগে ভোগে। ১৩ বছর বয়সী কেট লাউ বলে, আমরা পড়াশোনায় ভালো করতে চাই। এ জন্য অনেক বেশি চাপে থাকতে হয়। লকডাউনের পরে ভালো ফল করার চাপ আরও বেড়েছে।

সেরাঙ্গুন সেকেন্ডারি স্কুলের শিক্ষক মিখাইল চাও বলেন, ওই সেশনে কিছু শিক্ষার্থী জানিয়েছে, লকডাউনে ঘরের মধ্যে তারা নিঃসঙ্গ বোধ করেছে। তিনি বলেন, আমি মনে করি, অ্যানিমেশনের মাধ্যমে দেওয়া শিক্ষা শিশুদের নিঃসঙ্গতা দূর করতে সহায়তা করবে। অ্যানিমেশন চরিত্রগুলো দেখে শিশুরা বুঝতে পারবে—এ ধরনের সমস্যায় তারা একা নয়, অনেকেই ভুগছে।

সিঙ্গাপুরের ডিউক এনইউএস মেডিকেল স্কুলের স্বাস্থ্যবিষয়ক অধ্যাপক তাজিন জাফর বলছেন, কোনো কিছুই স্বাভাবিক নেই। শিক্ষার্থীদের সব সময়ই মাস্ক পরতে হয়। দূরত্ব মেনে চলতে হয়। এসবের মধ্যেও তাদের বাড়িতে প্রতিদিন পড়াশোনা সময়মতো করতে হয়। ফলাফলে ভালো গ্রেড পেতে হয়। নতুন এই জীবনযাপনে প্রত্যাশা পূরণে তাল মেলাতে গিয়ে শিক্ষার্থীরা, বিশেষ করে শিশুরা অতিরিক্ত মানসিক চাপ বোধ করে।

তাজিন জাফর বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিশুদের ওপর করোনা ভাইরাসের প্রভাব নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি বলেন, শিশুরা আগের মতো সামাজিক কর্মকাণ্ডে যুক্ত নেই। তারা কম খেলে, কম ঘুমায়। তুলনামূলকভাবে ঘরে পড়াশোনার সময় বেড়ে যাচ্ছে। এ ধরনের বাড়তি চাপ থেকেই শিশুদের মধ্যে বিষণ্নতা ও উদ্বেগ জন্মায়।

তাজিন জাফর আরও বলছেন, চীনে পরিচালিত গবেষণায় দেখা গেছে, প্রাপ্তবয়স্ক মেয়েরা করোনার কারণে মানসিক হতাশা ও উদ্বেগের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছেন। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, উচ্চমাধ্যমিক স্কুলের শিক্ষার্থীরা, যারা কলেজে ভর্তি হবে, তাদের মধ্যে উদ্বেগ ও মানসিক চাপ বেশি। তাঁর মতে, সিঙ্গাপুরে অ্যানিমেশনের মাধ্যমে বিশেষ সেশনে শিক্ষার্থীদের মানসিকভাবে চাঙা রাখার পদ্ধতি খুবই প্রশংসনীয়। দেশটিতে শিক্ষক, নার্স ও মনোবিদদের এ বিষয়ে বিশেষ প্রশিক্ষণও দেওয়া হচ্ছে। সাফল্য এলে এই মডেল পুরো দেশে কার্যকর করা যাবে বলে তিনি মনে করেন।

শুধু সিঙ্গাপুর নয়, এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে করোনাকালে শিক্ষার্থীদের মানসিক অসুস্থতা বেড়েছে। ২০১৫ সালে সিঙ্গাপুর ইনস্টিটিউট অব হেলথের গবেষণায় দেখা গেছে, মানসিক এ ধরনের অসুস্থতা থেকে শিক্ষার্থীদের চিকিৎসা ও আলোচনার মাধ্যমে সুস্থ করে তোলা সম্ভব। ওই গবেষণায় অংশগ্রহণকারীদের অর্ধেকের বেশি মানসিক দুর্বলতায় ভুগেছে। গবেষণা পরিচালনাকারীদের মধ্যে ১০ জনে ৯ জন মনে করেন, চাইলে এই মানসিক অসুস্থতা থেকে বের হয়ে আসা সম্ভব।