বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে ঝলক দেখানোর পর ঘরের মাঠে কোপা আমেরিকাতেও উড়ছে ব্রাজিল। এ পর্যন্ত সব ম্যাচে আধিপত্য দেখিয়ে জয় তুলে নিয়েছেন সেলেকাওরা।
তবে বৃহস্পতিবার ভোরে কলম্বিয়ার বিপক্ষে হোঁচটই খেতে যাচ্ছিল ব্রাজিল। সমর্থকদের কেউ কেউ হয়তা টিভি সেটের সামনে থেকে সরেই গেছেন, নিশ্চিত ড্রয়ের কথা ভেবে।
কিন্তু অতিরিক্ত সময়ে খেলার ফলই ঘুরিয়ে দিলেন ব্রাজিল দলের অধিনায়ক কাসিমিরো। তাকে পেছন থেকে সাপোর্ট দিয়ে গেছেন তারকা নেইমার। এই ম্যাচে জয়ের ফলে ব্রাজিল কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা নিশ্চিত করে ফেলেছে।
পুরো ম্যাচটাই নাটকীয়তায় ভরা। তবে ইনজুরি টাইম হিসেবে দেওয়া ১০ মিনিটের নাটকে ছিল উত্তেজনায় ঠাসা। যেখানে শেষ দৃশ্যে হাসি ফুটল ব্রাজিলের কুশীলবদের মুখে।
রিও ডি জেনেরোর নিল্তন সান্তোস স্টেডিয়ামে ‘বি’ গ্রুপের ম্যাচে কলম্বিয়ার বিপক্ষে শেষ পর্যন্ত ২-১ গোলে জিতেছে ব্রাজিল। এর আগে টানা দুই ম্যাচে কলম্বিয়ার বিপক্ষে ড্র করার পর তৃপ্তির জয় পেল তারা। এটি এবারের আসরে তাদের টানা তৃতীয় জয়।
হাড্ডাহাড্ডি লড়াইয়ের পাশাপাশি ম্যাচে ফাউলের ছড়াছড়ি দেখা গেছে। এ যেন ২০১৪ বিশ্বকাপের সেই ম্যাচ। যেখানে দুদলের লড়াইয়ে ৫৪-এর বেশি ফাউল হয়, যা একটি বিশ্বরেকর্ড।
ম্যাচে শুরু থেকে আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলেছে ব্রাজিল। অন্যদিকে নিজেদের রক্ষণকে জমাট রেখে প্রতি-আক্রমণের ছকে খেলেছে কলম্বিয়া।
আর দশম মিনিটে দুর্দান্ত এক গোল উপভোগ করেন কোপা আমেরিকার দর্শকরা। দুর্দান্ত এক বাইসাইকেল কিকে ব্রাজিলের জালে বল জড়িয়ে দেন লুইস দিয়াস।
দূরের পোস্টে চমৎকার এক ক্রস করেন হুয়ান কুয়াদরাদো। উইলমার বারিওস লাফিয়ে বলের নাগাল না পেলেও তার পেছন থেকে অসাধারণ সেই বাইসাইকেল কিকে ব্রাজিলের গোলরক্ষক ওয়েভেরতনকে পরাস্ত করেন।
লিড নিয়েই শিষ্যদের রক্ষণাত্মক ছকে নিয়ে যান কোচ রেইনালদো রুয়েদা। পুরোপুরি ডিফেন্সিভ হয়ে যাওয়া কলম্বিয়ার প্রাচীর ভাঙতে প্রথমার্ধে ব্যর্থ হয় ব্রাজিল। ১-০ তে পিছিয়ে থেকেই বিরতিতে যান সেলেকাওরা।
দ্বিতীয়ার্ধে নেমে ওই একই কায়দায় খেলতে থাকে কলম্বিয়া। আরও বেশি ডিফেন্সিভ হয়ে ওঠে।
এদিকে ফরমেশন ৪-৩-৩ থেকে সরে যায় ৪-৪-২ এ আনেন কোচ তিতে। এভেরতন রিবেইরোর জায়গায় বদলি নামান ফিরমিনোকে। আক্রমণ আরো ধারাল করেন।
কিন্তু নিজেদের গুটিয়ে নেওয়া কলম্বিয়ার জাল খুঁজে পেতে কষ্টসাধ্য হয়ে যায় নেইমারদের জন্য। দ্বিতীয়ার্ধের বেশিরভাগ সময় কলম্বিয়ার অর্ধেই ২১ ফুটবলারকে দেখা গেছে।
তবে এমন ডিফেন্সিভ হয়েও শেষ রক্ষা হয়নি কলম্বিয়ার। যদিও ৫৫তম ও ৬৬তম মিনিটে ব্যর্থ হন নেইমার। ৫৫তম মিনিটে ডি বক্সে ডিফেন্ডারের আগেই বলের কাছে পৌঁছান নেইমার। কিন্তু সুযোগ হাতছাড়া করেন।
৬৬তম মিনিটে ফিরমিনো পেনাল্টি স্পটের কাছে খুঁজে নেন নেইমারকে। পিএসজির এই তারকা ফরোয়ার্ডকে ঠেকাতে লাইন ছেড়ে বেরিয়ে আসেন অসপিনা। তাকে এড়িয়ে ডান দিকে সরে যান নেইমার, কিন্তু ফাঁকা জালে বল পাঠাতে পারেননি তিনি। তার শট ব্যর্থ হয় পোস্টে লেগে।
৭৮তম মিনিটে ঠিকই সফল হন সেলেকাওরা। রেনান লোদির ক্রসে ফিরমিনোর জোরালো হেড অসপিনার হাত ফস্কে জড়ায় জালে।
এই গোল তুমুল আপত্তি তোলে কলম্বিয়া। রেফারি প্রথমে ভিএআর দিয়ে অফসাইড চেক করেন। এর পর গোলের চূড়ান্ত বাঁশি বাজালেও কলম্বিয়ানরা প্রতিবাদ করেন। এ নিয়ে খেলা ৫-৬ মিনিট বন্ধ থাকে। শেষ পর্যন্ত রেফারির সিদ্ধান্তই মেনে নিতে হয় কলম্বিয়াকে। ১-১ সমতায় ফেরে ব্রাজিল। সমতা ফেরানোর পর আরও উজ্জীবিত হয়ে উঠে ব্রাজিল।
খেলার এই সময়টা নষ্ট হওয়ার কারণে ইনজুরি টাইম বাড়িয়ে দেওয়া হয় ১০ মিনিট। ওই ১০ মিনিট ছিল শ্বাসরুদ্ধকর। একেবারে শেষ মুহূর্তে ৯০+১০ মিনিটে জয়সূচক গোল করেন গোল করেন ক্যাসেমিরো।
ডান পাশের কর্নার থেকে কিক নেন নেইমার। সেই কিকে ভেসে আসা বলে দুর্দান্ত হেড করেন ক্যাসেমিরো। তার এই হেডেই কাঁপিয়ে দেয় কলম্বিয়ার জাল। ২-১।
এই জয়ে গ্রুপ ‘বি’তে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই চ্যাম্পিয়ন ব্রাজিল। এরই মধ্যে তিনটিতেই জয় পেয়েছে তারা, পয়েন্ট ৯। ৪ পয়েন্ট নিয়ে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে কলম্বিয়া।
এরই মধ্যে তারা নিজেদের সব ম্যাচ খেলে ফেলেছে। পরের রাউন্ডে যাওয়ার জন্য এখন তাদের অন্য ম্যাচগুলোর দিকেই তাকিয়ে থাকতে হবে।
ম্যাচ হাইলাইটস দেখুন—