কোপা আমেরিকার গ্রুপ পর্বে পেরুকে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল ব্রাজিল। সেই সুখস্মৃতিতে পুঁজি করেই মঙ্গলবার ভোরে মাঠে নামে ব্রাজিল।
আর ব্রাজিলের রক্ষণভাগ যে কত শক্তিশালী তার আরো এক প্রমাণ মিলল এ ম্যাচে। কোনোমতেই সেলেকাওদের ডিফেন্ডারদের পরাস্ত করে বল জালে জড়াতে পারল না পেরুর ফরোয়ার্ডরা।
৪-২-৩-১ ছকে খেলতে নেমে গোলরক্ষক এদেরসন মোরায়েসের সামনে দুই সেন্টারব্যাক হিসেবে খেলেছেন পিএসজির সাবেক দুই সতীর্থ থিয়াগো সিলভা ও মার্কিনিওস। দুই ফুলব্যাক হিসেবে খেলেছেন জুভেন্টাসের দানিলো ও আতলেতিকো মাদ্রিদের রেনান লোদি। মিডফিল্ডার ফ্রেড ও কাসেমিরোকে পেছনে রেখে আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডে খেলেছেন লুকাস পাকুয়েতা। উইঙ্গার হিসেবে বল টেনে নিয়ে গেছেন রিচার্লিসন ও এভেরতন সোয়ারেস। আর সবার সামনে স্ট্রাইকার হিসেবে খেলেছেন নেইমার।
নেইমার-পাকুয়েতার ছন্দময় খেলায় পরাস্ত হয়েছে পেরু। গেরেসার দলকে আবার হারিয়ে টানা দ্বিতীয়বারের মতো ফাইনালে উঠেছে তিতের দল।
এবারের ব্যবধানটা বেশি নয়। রিও দে জেনেইরোর নিল্তন সান্তোস স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ সময় মঙ্গলবার ভোরে সেমি-ফাইনালে ১-০ গোলে জিতেছে ব্রাজিল।
ম্যাচের প্রথম ২০ মেনিটে বেশ দাপট দেখিয়েছে ব্রাজিল। একাধিকবার পেরুর রক্ষণে চাপ বাড়িয়েছে তারা। একেরপর এক আক্রমণে ব্যতিব্যস্ত করে রেখেছে পেরু রক্ষণ ও গোলরক্ষককে।
৬ মিনিটের মাথায় লোদির ক্রস বিপদ ডেকে আনার আগেই মাঠের বাইরে বার করে দেন কোরজো। কর্ণার পেয়ে যায় ব্রাজিল। ৮ মিনিটের মাথায় পাকুয়েতা বল বাড়িয়ে দেন রিচার্লিসনের দিকে। তিনি নেইমারের দিকে বল বাড়িয়ে দিলে ব্যর্থ হন নেইমার।
১৩ মিনিটের মাথায় জোরালো শট নেন ক্যাসেমিরো। তা প্রতিহত করে সামর্থ্যের পরিচয় দেন পেরুর গোলরক্ষক গালেসে। ১৫ মিনিটের মাথায় এভার্টনের শট প্রতিহত করেন গালেসে। ১৯ মিনিটের মাথায় পাকুয়েতা-নেইমার জুটি আক্রমণে ওঠে। নিজেদের মধ্যে বল দেওয়া-নেওয়া করে পেরুর ডি-বক্সে ঢুকে যায়। তবে গেলেসেকে পরাস্ত করা সম্ভব হয়নি তাদের পক্ষে।
অবশ্য এবার লুকাস পাকুয়েতাকে আটকে রাখতে সক্ষম হননি গেলেসে। ৩৫ মিনিটের মাথায় ফের নেইমারের সঙ্গে ভালো বোঝাপড়া হয় পাকুয়েতার। দুর্দান্ত এক গোল করে লিড এনে দেন দলকে। মাঝ মাঠ থেকে বল পেয়ে ডি-বক্সে ঢুকে যান নেইমার। তিন খেলোয়াড়ের মাঝ দিয়ে খুঁজে নেন অরক্ষিত পাকুয়েতাকে। এবার বল জালে জড়িয়ে দেন অলিম্পিক লিওঁর এই মিডফিল্ডার।
এই পাকুয়েতারা একমাত্র গোলে জিতেই কোয়ার্টার ফাইনাল পার করেছে ব্রাজিলকে। টানা দ্বিতীয় ম্যাচে স্কোরার হলেন তিনি।
প্রথমার্ধে ব্রাজিলশিবিরে উল্লেখ করার মতো তেমন কোনো আক্রমণে জেতে পারেনি পেরু। রেফারি ৫ মিনিট সময় সংযোজিত করলেও সমতায় ফিরতে পারেনি তারা।
১-০ গোলের স্কোরলাইনে বিরতিতে যায় দুই দল।
দ্বিতীয়ার্ধে নেমে অবশ্য আক্রমণে মনোযোগ দেয় পেরু। ছোট ছোট পাসে বেশ কয়েকবার ব্রাজিল রক্ষণকে কাঁপিয়ে দিয়েছিল পেরু। ব্রাজিলও তার আক্রমণাত্মক খেলা টিকিয়ে রাখে। ৫০তম মিনিটে সমতা ফেরানোর ভালো একটা সুযোগ পায় পেরু। এদেরসনের নৈপুণ্যে তা আর হয়ে ওঠেনি।
নিজেদের অর্ধ থেকে ইয়োশিমার ইয়োতুনের বাড়ানো বল ধরে ডি বক্স থেকে শট নেন জানলুকা লাপাদুলা। ঝাঁপিয়ে কোনোমতে ফেরান এদেরসন।
আক্রমণের ধার বাড়াতে ট্রাউকোকে তুলে নিয়ে লোপেজ ও রামোসের বদলে লেফট উইঙ্গার গার্সিয়াকে মাঠে নামান কোচ রিকার্দো গেরেসা। বদলি হিসেবে নেমে গোলপোস্ট বরাবর দুর্দান্ত এক শট নেন গার্সিয়া। শট লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
গোল পেতে মরিয়া হয়ে ওঠে পেরু। ৫৬ মিনিটের মাথায় হলুদ কার্ড দেখেন পেরুর ইয়োতুন। ৬১ মিনিটের মাথায় অফসাইড হন লাপাদুলা। ৬৬ মিনিটের মাথায় ব্রাজিলের অন্যতম মিডফিল্ডার ফ্রেডের একটি চেষ্টা ব্যর্থ হয়। ৭০ মিনিটে এভার্টনকে তুলে নিয়ে রিবেইরোকে মাঠে নামা ব্রাজিল।
৭১ মিনিটের মাথায় বল নিয়ে পেরুর বিপজ্জনক জায়গায় ঢুকে পড়েন রিচার্লিসন। তাকে ফাউল করেন কোরজো। ব্রাজিলের পেনাল্টির আবেদন করে। কিন্তু তাতে কান দেননি রেফারি। ৭৫ মিনিটে কোরজোকে তুলে নিয়ে লরাকে মাঠে নামায় পেরু।
এবার নেইমারকে ফাউল করে বিপজ্জনক জায়গা থেকে ব্রাজিলকে ফ্রি-কিক উপহার দেন কলেন্স। তবে সফল হয়নি সেলেকাওরা। ৭৮ মিনিটে অফসাইডের আওতায় পড়েন লাপাদুলা। ৮১ মিনিটে কুয়েভাকে তুলে নিয়ে পেরু অর্মেনোকে মাঠে নামায়।
৮১ মিনিটে ইয়োতুন ক্রসে দর্শণীয় এক হেড করেন কলেন্স। তবে বল মাঠের বাইরে চলে যায়। এদেরসনকে খাটতে হয়নি।
৮৫ মিনিটে তিতের হঠাৎ অন্যরকম খেয়াল হয়। ফ্রেড, রিচার্লিসন ও লোদিকে তুলে নিয়ে ফ্যাবিনহো, ভিনিয়িসাস জুনিয়র ও মিলিতাওকে মাঠে নামান। মাঠে নামার ৪ মিনিটের মধ্যেই ৮৯ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন ভিনিসিয়াস জুনিয়র।
শেষ মুহূর্তে আরো একটি পরিবর্তন আনে পেরু। ৮৯ মিনিটে তাপিয়াকে তুলে নিয়ে তাভারাকে মাঠে নামান গেরেসা।
৯০ মিনিটে হলুদ কার্ড দেখেন লোপেজ। দ্বিতীয়ার্ধে ৫ মিনিট সময় সংযোজিত হলে ভিন্ন রক্ষণাত্মক খেলার পরিকল্পনা নেন তিতে। এই অতিরিক্ত সময়ে একমাত্র স্কোরার পাকুয়েতাকে তুলে নিয়ে ডগলাসকে মাঠে নামায় ব্রাজিল।
রেফারির শেষ বাঁশিতে ১-০ গোলে জয় নিয়ে কোপা আমেরিকার এবারের আসরের ফাইনালিস্ট হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করে ব্রাজিল।
ব্রাজিলের হয়ে নেইমার যে কত গুরুত্বপূর্ণ তা এই ম্যাচেও দৃশ্যমান। এই নিয়ে সেলেকাওদের হয়ে ১১০ ম্যাচ খেলে ৬৮ গোল করার পাশাপাশি ৪৯ গোলে সহায়তা করা হয়ে গেল পিএসজির এই ফরোয়ার্ডের। জয়ের নায়ক পাকুয়েতা হলেও নেপথ্য নায়ক নেইমার।